ছয় রণক্ষেত্রের পাঁচটিতেই পিছিয়ে বিজেপি

রাহুল গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি

লোকসভা নির্বাচন

ছয় রণক্ষেত্রের পাঁচটিতেই পিছিয়ে বিজেপি

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের বুথফেরত জরিপের ফলাফল দেখে কে আঁচ করতে পেরেছিলো যে পরিস্থিতি এভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। মঙ্গলবার (৪ জুন) বেলা ১১টা পর্যন্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রাথমিক ফল দেখে মনে হচ্ছে যে দুদিন আগে বুথফেরত জরিপের ফলে বিজেপি বা এনডিএ নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলো তা সম্ভবত ফলছে না।

বুথফেরত জরিপের এক সমীক্ষার ফলে জানানো হয়েছিলো যে, বিজেপি এবং এনডিএ গতবারের চেয়েও ভালো ফলাফল করে ৪০০ আসনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।

কিন্তু বেলা এগারোটার চিত্র দেখাচ্ছে, শাসক দল তার খুব কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারছে না।

বরং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ আশাতীত ভালো করছে। সবচেয়ে বড় কথা, বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেস জমি ছাড়েনি। ফলাফলের প্রাথমিক ফল ধরে রাখতে পারলে কংগ্রেস এক'শ আসন পেরিয়ে যেতে পারে।

আরেকদিকে ভারতের শেয়ারবাজারের সূচকে বিশাল দরপতন লক্ষ্য করা গেছে।

আজ সকালে ফল ঘোষণা শুরুর পর এই বাজারের প্রায় ৩ হাজার সূচক পড়ে গেছে।

এবারের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি বিষয়গুলো নিয়ে বিজেপি সরকারের প্রতি মানুষের বেশ কিছুটা অনাস্থা এসেছে।

এবারের ভোট বিশ্লেষকদের নজরে ছিল ছয়টি বড় রাজ্য, যার মধ্যে  কর্নাটক (২৮), মহারাষ্ট্র (৪৮), বিহার (৪০), উত্তর প্রদেশ (৮০), পশ্চিমবঙ্গ (৪২) ও অন্ধ্র প্রদেশ (২৫) রয়েছে। কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রাথমিক ফলে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র অন্ধ্র প্রদেশ ছাড়া বিজেপি শরিকেরা ততোটা ভালো ফল করতে পারেনি।

বাকি পাঁচ রাজ্য যেগুলো এবার ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসবে পরিচিত সেগুলোতে বিজেপির হাল বেশ খারাপ। যে রাজ্য থেকে বিজেপি এবার ৭০–৭৫ আসন পাবে বলে আশা করছিল, সেখানে প্রাথমিক ফলে দেখা যাচ্ছে, ইন্ডিয়া জোট ৪৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ আসনে এগিয়ে সমাজবাদী পার্টি, সাতটি কংগ্রেস।

বেলা ১১টার ফলে দেখা যাচ্ছে আমেথিতে পিছিয়ে রয়েছেন স্মৃতি ইরানি। এমনকি কিছুটা সময় বারানসিতে পিছিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

কর্নাটকে বিজেপি ও তার সহযোগীরা গতবার পেয়েছিল ২৭ আসন। একটি মাত্র আসন পেয়েছিল বিরোধীরা। এবার সেখানে কংগ্রেস অন্তত ১০ আসনে এগিয়ে রয়েছে। মহারাষ্ট্রের ফল চমকে দিচ্ছে। বিজেপি ও তার সহযোগী শিন্ডে শিবসেনা ও অজিত পাওয়ারের এনসিপিকে সরিয়ে জায়গা দখল করেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও কংগ্রেস। বেলা ১১টার পর্যন্ত তারা এগিয়ে রয়েছে মোট ৩০ আসনে। বিহারে এনডিএ ভালো করলেও ইন্ডিয়ার কাছে তারা পিছিয়ে রয়েছে অন্তত ৮টি আসনে। গতবার তারা একটিমাত্র আসন হারিয়েছিল কংগ্রেসের কাছে।

বিজেপি এবার প্রবল আশা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ঘিরে। গতবার তারা ৪২ আসনের মধ্যে পেয়েছিল ১৮টি। এবার বেলা ১১টার হিসেবে তারা এগিয়ে মাত্র ১২টিতে। তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে ৩০টিতে।

ব্যাটেল গ্রাউন্ড রাজ্যগুলো বাদ দিলে হিন্দি–বলয়ের অন্য রাজ্যেও বিজেপিকে প্রবল লড়াইয়ের মধ্যে রেখেছে কংগ্রেস। যেমন রাজস্থান। গতবার বিজেপি ২৫ আসনই জিতেছিল। এবার কংগ্রেস ১০ আসনে এগিয়ে। হরিয়ানার ১০ আসনই জিতেছিল বিজেপি। এবার কংগ্রেস সেখানে ছয়টিতে এগিয়ে। বিজেপি হিন্দি–বলয়ে ভালো করছে গুজরাট, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে।

যদিও বিজেপির মান বাঁচাচ্ছে যে দুই রাজ্য, তার একটি ওডিশা, অন্যটি তেলেঙ্গানা। ওডিশাতে ২১ আসনের মধ্যে বিজেপি বেলা ১১টায় ১৯ আসনে এগিয়ে। তারা বিধানসভায়ও এগিয়ে রয়েছে। তেলেঙ্গানার ১৭ আসনের মধ্যে বিজেপি গতবার পেয়েছিল ৪টি, এবার ৮টিতে তারা এগিয়ে। কংগ্রেসও এগিয়ে ৮ আসনে। এই রাজ্যে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথে বিআরএস।

উল্লেখ্য, ভারতে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। সেই নিরিখে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ অনেকটা এগিয়ে। কিন্তু এইবার ৪০০ পার করার মোদির যে স্লোগান তা ইতোমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে।

news24bd.tv/SC