গাজায় হামলা এবং পশ্চিমাদের ভাগ্য

গাজায় হামলা এবং পশ্চিমাদের ভাগ্য

অনলাইন ডেস্ক

গাজার উত্তর থেকে সরিয়ে নেওয়া বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরেকটি "নিরাপদ" অঞ্চলে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে ইসরায়লি হামলায় অনেকগুলো তাঁবুতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে আনা হয় একটি জ্বলন্ত পোড়া শরীর।

গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে বৃহত্তর হলোকাস্টের সাথে তুলনা করা যেতে পারে কারণ ইসরায়েলের সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাতান ভিলনাই ২০০৮ সালে এমনই কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

গাজার পর সেখানকার শরণার্থীরা যেসব নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে সেখানেই ইসরায়েল হামলা করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল মাওয়াসি, নুসেইরাত এবং বুরেইজ ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে বোমাবর্ষণ করেছে।

পশ্চিমা যেসব নেতারা এই গাজায় এবং শরণার্থী শিবিরে হামলার ঘটনায় নিশ্চুপ হয়ে আছেন তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ রয়েছেন।

তারা ২ হাজার পাউন্ড বোমা তৈরি করে জাবালিয়া ক্যাম্পের উপর সেটি নিক্ষেপ করিয়ে গণহত্যার সকল সংজ্ঞাকে ছাড়িয়ে গেছেন।

নিরস্ত্র বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য পশ্চিমারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে।

আমেরিকান কর্মকর্তারা সাধারণত একজন ইসরায়েলি হত্যার নিন্দা জানাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করেন না। কিন্তু ইসরায়েলের হাতে গাজার মানুষ হত্যার বিষয়টি তারা সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যান।

রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা এবং শিশুদের পুড়িয়ে ফেলা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "হামাসের পেছনে ইসরায়েলের যাওয়ার অধিকার রয়েছে"।

হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সমন্বয়ক জন কিরবিকে সিবিএস নিউজের সিনিয়র হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা এড ও'কিফ মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "আর কত পোড়া মৃতদেহ দেখতে হবে?"

কিরবি উত্তর দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের হামলার তদন্ত করা হচ্ছে। যেকোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে তদন্ত শেষ করার জন্য সময় দেওয়া উচিত।

আমেরিকার এরকম মানসিকতার কারণেই নেতানিয়াহুর যুদ্ধবাজ মনোভাব উসকে গেছে বলেই ধারণা করা হয়। এর পাশাপাশি জো বাইডেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা নেতাদের থেকে প্রাপ্ত সবুজ সংকেতকে ব্যবহার করে তিনি মানবতাবিরোধী সব সীমা অতিক্রম করছেন।

ইসরায়েলি ট্যাংক রাফাহর কেন্দ্রে পৌঁছে ইউএনআরডব্লিউএ এবং ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) কে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করতে একরকম বাধ্যই করা হয়।

ইসরায়েল পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বিষয়ে ক্রে জানিয়েছে, ডব্লিউসিকে সহায়তা কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি ইচ্ছাকৃত ছিল না। ইসরায়েলের সেনাপ্রধান জেনারেল স্টাফ হার্জি হালেভি এটিকে একটি "গুরুতর ভুল" বলে ঘোষণা করেছেন। একইভাবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাফাহতে সর্বশেষ গণহত্যাকে একই ধরনের অভিধানে বর্ণনা করেছেন। তিনি এটিকে একটি "দুঃখজনক দুর্ঘটনা" বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১৪০ জন নিহত সাংবাদিকের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একজন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন যে তারা "কখনোই ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের টার্গেট করেননি। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিষয়ে ইসরায়েল দাবি করে, অনিচ্ছাকৃতভাবে এগুলো ঘটছে এবং "বেসামরিকদের ক্ষতি কমানোর জন্য কার্যকরীভাবে সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। "

গত সাত মাসে ইসরায়েল তাদের তথাকথিত "ভুলবশত" হামলায় ২২৫ জনেরও বেশি মানবিক সহায়তা কর্মীকে হত্যা করেছে যা "এক বছরে যেকোনো একক সংঘাতে রেকর্ড পরিমাণ নিহত হওয়া মানবিক সহায়তা কর্মী। "

এছাড়া ৭০০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবক তাদের জীবন হারিয়েছে। গাজা গোলচত্বরে খাদ্য সহায়তার জন্য ট্রাকের অপেক্ষায় শত শত ক্ষুধার্ত মানুষ মারা গেছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে, ইসরায়েল দায় অস্বীকার করেছে এবং নিহতদের মৃত্যুর জন্য নিজেদের দায় এড়িয়েছে।

পশ্চিমারা গাজায় তৈরি হওয়া দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান করে। অন্যদিকে ইসরায়েলকে হামলা চালানোর জন্য যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে। গাজা শুধুমাত্র ক্ষুধার্ত শিশুদের সমাধি নয় বরং পশ্চিমা সভ্যতার মূল্যবোধের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। (সূত্র: কাউন্টারপাঞ্চ

news24bd.tv/SC