তেমন বরাদ্দ বাড়ছে না স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও কৃষিতে

তেমন বরাদ্দ বাড়ছে না স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও কৃষিতে

অনলাইন ডেস্ক

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়ছে খুব সামান্যই। জানা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পাচ্ছে না কৃষিখাত। স্বাস্থ্যখাত পাচ্ছে অর্ধেকের কিছু বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ শতাংশ কম বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা।

এমনিতেই এই তিন খাতকে ধরা হয় অবহেলিত, এরপর সামান্য এই বরাদ্দ দিয়ে খাত তিনটির কতটা উন্নয়ন হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব খাতে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি সেবার মান উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। জানা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খাত পিছিয়ে রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও এসব খাতে সামান্যই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য খাতে ১১.১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্ষেপণ রয়েছে, যেখানে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে টাকার অংকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকরা নিজেরা সংস্থান করে। গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাজেটের ১২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৫ শতাংশের আশপাশে ছিল। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ২ শতাংশের মতো, আর স্বাস্থ্য খাতে তা ১ শতাংশের মতো।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও চিকিৎসার বেহালের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, অনেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের তেমন সুযোগ নেই। এখানকার মেডিক্যাল কলেজগুলো নিম্নমানের। যাঁদের দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষার মান দেখার দায়িত্ব, তারা সেটা পালন করছেন না। ভালো মানের ডাক্তার তৈরি না হলে সেবার মান কখনো বাড়বে না।

শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। শুধু শিক্ষা খাতে প্রায় ১৪ শতাংশ বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মিলছে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে টাকার অঙ্কে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা, যা মোট উন্নয়ন বাজেটের ১১.৯০ শতাংশ। যদিও শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বরাদ্দের বড় অংশই অর্থবছর শেষে খরচ হয় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে প্রয়োজন পরিকল্পিত উন্নয়ন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই খাত দুটিকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। এই দুই খাতে অবকাঠামো নির্মাণ হলেও সেবার মান উন্নত হচ্ছে না। ভালো চিকিৎসা পেতে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে। যাদের টাকা নেই তারা ভালো চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। এদিকে মানসম্মত শিক্ষার অভাবে লেখাপড়া শেষ করেও চাকরি মিলছে না।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশে কর্মমূখী শিক্ষা নেই। লেখাপড়া করে শুধু কাগজে-কলমেই শিখছে, বাস্তবে কিছু শিখছে না। ফলে লেখাপড়া শেষ করেও বেকার থাকছে। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন দরকার। কর্মমুখী শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ’

এদিকে, কৃষি খাতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রক্ষেপণ থাকলেও আগামী অর্থবছরে এ খাতে উন্নয়নে বরাদ্দ মিলছে মাত্র ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। টাকার অংকে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। তাই পরিকল্পিত উন্নয়নে কৃষি খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিবিএসের হিসাবে বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে কৃষকের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৫ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রান্তিক চাষি যারা লাভবান হচ্ছেন না বা পণ্যের মূল্য পাচ্ছেন না তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। দেশের কৃষকদের সব দিক দিয়েই খরচ বাড়ছে। বিশেষ করে শ্রমিকের খরচ বাড়ছে। ধান কাটতে গেলে দৈনিক জনপ্রতি এক হাজার টাকা লাগে, কিন্তু তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান না।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক ড. আবাদুল মালেক বলেন, কৃষির উন্নয়নে এ খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি উন্নয়ন টেকসই করতে সরকারকে কৃষির বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষির উন্নয়নে উন্নত বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকের উৎপাদন ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য শস্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি উৎপাদনে লাভ না পেলে পেশা ছাড়বেন কৃষক। তখন খাদ্য নিরাপত্তা সংকট দেখা দেবে।

news24bd.tv/SHS

এই রকম আরও টপিক