মাকে নির্যাতন করায় বাবাকে হত্যা, লাশ টয়লেটে

বাবাকে হত্যা

মাকে নির্যাতন করায় বাবাকে হত্যা, লাশ টয়লেটে

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

কারণ ছাড়াই চোখের সামনে মাকে অমানুষিক নির্যাতন করা সহ্য করতে না পেরে বাবাকে হত্যা করে লাশ টয়লেটের ট্যাংকে ফেলে দিয়েছে ছেলে আবুল হাসান।

শুক্রবার রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় পুলিশের কাছে বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ছেলে আবুল হাসান।

ছেলে হাসান ২০১৮ সালে মধুগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। সম্প্রতি তার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় ফেনীর ছাগলনাইয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবুল কালাম হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম বলেন, আবুল কালাম ছাগলনাইয়ার পশ্চিম মধুগ্রামের মিদ্দা বাড়ির মৃত সামছুল হকের ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক বাবুর্চি ছিলেন। অসামরিক কর্মচারি হিসেবে সেনাবাহিনীতে চাকরি করে কবছর আগে অবসরে যান তিনি। ৪ জানুয়ারি শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন আবুল কালাম।

নিখোঁজের ৬ দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী রেখা আক্তার ও ছেলে আবুল হাসানকে আটক করা হয়। পরে আবুল হাসানের বন্ধু ইমাম হোসেন রহিমকেও আটক করা হয়। রহিম কয়ৈরা গ্রামের ওসমান গনির ছেলে। ঘটনার ক্লু উদঘাটন হওয়ার পর শুক্রবার রাতেই রেখা আক্তারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ছেলে আবুল হাসান ও বন্ধু ইমাম হোসেন রহিমকে।

নিহতের ছেলে আবুল হাসান জানান, তারা ৫ ভাই বোন। তার বাবা কোনো কারণ ছাড়াই প্রায়ই তার ছোট ভাই-বোন এবং মাকে মারধর করতেন। ভাষা ব্যবহার সুন্দর ছিল না। নিজ চোখের সামনে এসব দেখে তিনি বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

গত ৪ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে হাসান তার ভাইবোনসহ মাকে নিয়ে নানার বাড়ি চলে যায়। সন্ধ্যায় এলাকায় ফিরে তার বন্ধুদের লাঠির মত নলকূপের গাজী পাইপ বাবার মাথার পেছনে জোরে আঘাত করে হাসান। আঘাত পেয়েই বাবা খাটের ওপর পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি বাবার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দেখি কোনো নড়াচড়া নেই।

তিনি আরও বলেন, বাবাকে জানে মেরে ফেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বাবা মারা গেছে দেখে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। লাশ কোথায় লুকাবো- এনিয়ে বন্ধুরা প্রায় চার ঘণ্টা বুদ্ধি খাটিয়ে রাত আড়াইটার দিকে ঘরের পেছনে পায়খানার ট্যাংকের ঢাকনা খুলে ভেতরে ফেলে দেই।

ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ছেলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার এবং আরও তিন বন্ধু জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নাম পরিচয়ও পুলিশকে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্ধু ইমাম হোসেন রহিম আটক রয়েছেন। বাকি দুজনকে আটক করতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বৃহস্পতিবার রাতে তার ছোট ভাইয়ের বউ তাকে ফোন করে বলেন, তাদের টয়লেটের ঢাকনা ফাঁক হয়ে আছে। উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি এ খবর শুনে পরদিন তার পাঠাননগরের স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসেন। বাড়ির আশপাশের লোক ডেকে পুলিশে খবর দেন।

আবুল কালামের বোন রাহেনা আক্তার জানান, তার ভাই দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৫ ছেলে মেয়ে। এ বউকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকতেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ২ ছেলে মেয়ে। তারা ঢাকায় থাকেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর