৬ নারীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়ালেন ছাত্রলীগ নেতা!

প্রতীকী ছবি

৬ নারীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়ালেন ছাত্রলীগ নেতা!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নানা কায়দায় ফাঁদে ফেলে ছয় নারীকে ধর্ষণ ও সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদারের (২২) বিরুদ্ধে। তিনি এখন পলাতক। তবে তার ছড়ানো সেই ভিডিওগুলো এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে মুঠোফোন থেকে মুঠোফোনে। এর ফলে কোন গৃহবধূকে ছাড়তে হয়েছে শ্বশুরবাড়ি।

কেউ ছেড়ে গেছেন গ্রাম। কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে ঘটনার শিকার ছাত্রীদের।

আরিফ শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।  

জানা গেছে, কখনো গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা বসিয়ে দৃশ্য ধারণ, কখনো অন্য উপায়ে নারীদের দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করতেন আরিফ।

এরপর সেই ভিডিও দেখিয়ে বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে বিছানায় যেতে বাধ্য করতেন। সেই দৃশ্য আবার ভিডিও করে রাখতেন। এরপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্লাকমেইল করতেন। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ পর্যন্ত আদায় করতেন। লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি, আইনের আশ্রয়ও নেননি। ঘটনার শিকার নারীরা ভিডিও না ছড়ানোর জন্য আরিফের নানা আবদার (অর্থ প্রদান) পূরণ করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেইসব ভিডিও আরিফ ছড়িয়ে দিয়েছে খোলা বাজারে।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণ করেন প্রথমে। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন। সেটাও গোপনে ভিডিও করেন। এরপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন ওই গৃহবধূর কাছ থেকে। সেই ভিডিও এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে।

এভাবে ফাঁদে ফেলে ছয়জন নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ধর্ষণের ভিডিওগুলো গ্রামের মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন প্রবাসীর স্ত্রী। তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে এরইমধ্যে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক গৃহবধূ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ আছেন কলেজছাত্রী। তাদের কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।  

এক কলেজছাত্রী বলেন, ''আরিফ অনেকদিন ধরে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছিল। সাতে সাড়া না দেওয়ায় তার ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে পোশাক বদলানোর দৃশ্য ধারণ করে। এরপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করে। সেইসব ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে আরিফ। এখন আমি সমাজে মুখ দেখাব কেমন করে। ''


এদিকে আরিফ এখন পলাতক। পুলিশের পাশাপাশি তাকে স্থাণীয়রাও খুঁজছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের কেউ তার অবস্থান জানে না। আরিফের মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, '' আমি আরিফের বাবাকে নির্দেশ দিয়েছি তাঁকে হাজির করার জন্য। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানো হয়েছে। তাঁকে পাওয়া গেলে সামাজিকভাবে বিচার করা হবে। ’'

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। '

এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, সে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। ছাত্রলীগের মতো একটা সংগঠনের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই এলাকায় যাই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। আরিফ হোসেনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিচারের জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে যা যা করার তা করা হবে।

জানা গেছে, আরিফ স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। ২০১৫ সালের জুন মাসে তাঁকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত খবর