রাজধানী ঢাকায় গত দুই দিন ধরে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বুধবার রাতে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বৃহস্পতিবার রাতে এই আতঙ্ক কিছুটা কম ছিল। এই অবস্থা থেকে দ্রুত বের হতে চান রাজধানীবাসী।
বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘অন্তত ৪০ জন সশস্ত্র ডাকাত গভীর রাতে প্রধান ফটক ভেঙে আমার বাসায় ঢোকে। তারা নারী, শিশুসহ আমাকেও মারধর করে বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এক পর্যায়ে ডাকাতরা বাসা থেকে বের হয়ে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লাকি আয়রন স্টোরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে।
গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ১৭০/১ পোস্তগোলার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা। কামাল দাবি করেন, ডাকাতদলের সদস্যদের বেশির ভাগ এলাকার দুর্বৃত্ত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ কিশোর ও তরুণ।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ব্যবসায়ী মো. শিপন বলেন, ‘ওষুধের দোকান বন্ধ করে গত বুধবার রাত ১০টার দিকে শোমসপুর বাজার থেকে জানিপুরের সড়ক দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। এ সময় পথে একদল ডাকাত আমাকে আটকে সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিতে গেলে মারধর করে। ’
একইভাবে পাবনার আটঘরিয়া পৌর এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, উত্তরচক মহল্লায় এক সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে।
ডাকাতদল এ সময় টাকা, স্বর্ণালংকার, আসবাবসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালপত্র লুটে নিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত সোমবার থেকে দেশে শুরু হয় ব্যাপক নৈরাজ্য। ডাকাতির পাশাপাশি লুটপাট, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ মানুষের বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে করা হয় অগ্নিসংযোগ। সেই থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে চলতে থাকে ব্যাপক ডাকাতি, ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ।
বুধবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট। রাজধানীর মোহাম্মদপুর তিনরাস্তা দিয়ে সিকদার মেডিক্যালের দিকে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেন। রায়েরবাজারে পৌঁছলে পাঁচ-ছয়জন তরুণ তাঁর গতি রোধ করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল ছোরা, চাপাতি, রডসহ দেশীয় অস্ত্র। অস্ত্রের মুখে ডাকাতদল সানোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়।
একইভাবে মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, বসিলা, বসিলা মেট্রো হাউজিং, জিগাতলাসহ ধানমণ্ডি, হাজারীবাগ এলাকা, শনির আখড়া, বাড্ডার আফতাবনগর, হাতিরঝিল, রূপনগর, ভাটারা, খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুরের আরশিনগর, আটিবাজার, নয়াবাজার, মিরপুরের পল্লবী, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর এলাকা, উত্তরার ৮-৯, ১০-১১ নম্বর সেক্টরসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি বেড়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়ও রাতে দল বেঁধে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
এসব ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক কাজ করছে রাজধানীবাসীর মনে। রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বরের ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, এই পরিস্থিতি আর নিতে পরছি না। দ্রুত ডাকাত আতঙ্ক থেকে বের হতে চাই। মিরপুরসহ রাজধানীর একাধিক এলাকার বাসিন্দারা এই অবস্থার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল দেশে ফিরেই ঘোষণা দেন সরকারের এখন প্রধান কাজ হবে দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। তিনি রাতে শপথ নেওয়ার পরও দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
news24bd.tv/আইএএম