অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. মাহফুজ আলম। গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৃতীয় সমন্বয়ক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্ত হলেন মাহফুজ আলম। তবে তার নিয়োগের পর থেকেই সবার মনে প্রশ্ন, কে এই মাহফুজ আলম? ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সেভাবে আলোচনায় না থাকলেও হঠাৎ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হয়ে যাওয়ায় তাকে নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতে গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে যা জানাল জ্বালানি মন্ত্রণালয়
মাহফুজ আলম ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর উপজেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইসাপুর গ্রামে। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
মাহফুজ আলমের প্রথম আলোচনায় আসেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর। এর কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হয়ে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন খোলাসহ গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখা, সরকারকে সংহত করা, রাষ্ট্র ও সমাজের নানা অংশীজনের সঙ্গে বলে আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরির কথা জানান।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ থেকে কতজন নিয়োগ পেয়েছেন আনসারে, জানালেন ডিজি
ওই সাক্ষাৎকার আরও বেশি আলোচিত হয়, তার বক্তব্যে ভুলভাবে মিডিয়ায় আসায়। পরে এ নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে, তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়ালেই থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করে গেছেন তিনি। অনেকে তাকে, চব্বিশের এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড এবং সমন্বয়কদের সমন্বয়ক বলেও অভিহিত করেন।
রবিউল রাফি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সাবেক ছাত্র রবিউল রাফি জানান, জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকেই 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এক নতুন ধরনের আন্দোলন কাঠামো তৈরি করতে করতে এগিয়েছে। যার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন কখনোই পরিচিত ছিল না। সাধারণত যেকোনো আন্দোলন আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হলেও এইবারের আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ডিকশনারিতে যোগ করেছে নতুন শব্দ 'সমন্বয়ক'। এরপরে একের পর এক যোগ করেছে আরো নতুন নতুন টার্মিনোলজি- 'বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউন, মার্চ ফর ঢাকা' এই ধারনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আগে কখনো দেখেনি।
আরও পড়ুন: জীবনের নিরাপত্তা চাইলেন সোহেল তাজ
তিনি আরও জানান, ছয় সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে থাকার পরেও একের পর এক কর্মসূচি আসে। সফল হতে থাকে প্রতিটা কর্মসূচি। তিনি তার এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, কীভাবে কে কোথায় বসে তৈরি করতো এই রূপরেখা? এই চিন্তা আমার মাথায় তখন থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সম্প্রতি ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেব নিয়োগ প্রদান করে মাহফুজ ভাইকে প্রকাশ্যে আনার মাধ্যমে সেই জটটা খুলতে শুরু করেছে।
মাহফুজ আলম বর্ণনা করে তিনি আরও লেখেন, সে আমার হলের ইমিডিয়েট সিনিয়র। আমাদের সবার পরিচিত মুখ। চুপচাপ এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের মাহফুজ ভাইকে দেখতাম হলের পুকুর পাড়ে বসে থাকতে, চুপচাপ জামাই এর দোকানে খাবার খেতে। দীর্ঘ ৬-৭ বছরের হল জীবনে কখনোই আলোচনায় আসার মতো কিছু বলতে বা করতে দেখেনি কেউ। কিন্তু হঠাৎ আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসলেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা কোনো পরামর্শই কানে নেননি: রিমান্ডে ইনু
তিনি আরও লেখেন, সিরাজুল আলম খান এই জহুরুল হক হলকে (তৎকালীন নাম ইকবাল হল) কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছিলেন গোপন সংগঠন 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ'। যাদেরকে ইতিহাসে আমরা নিউক্লিয়াস নামে চিনি। সেই হলেই আবারো এক ঝাকড়া চুলের যুবক আসবে, যার মাথার ক্ষুরধার বুদ্ধিতে কবর রচনা হবে প্রবল পরাক্রমশালী এক ফ্যাসিস্ট রেজিমের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসলেই এক আজব জায়গা। আগে ইতিহাস পড়তে গেলে এসব চোখে পড়ত, আর এবার চোখের সামনে নতুন ইতিহাস তৈরি করতে দেখলাম।
news24bd.tv/SHS