‘সেই চারজনের মধ্যে একজনের নাম শম্পা’

ফেনীর সোনাগাজীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ ছাত্রী ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি

ছাত্রীর গায়ে আগুন

‘সেই চারজনের মধ্যে একজনের নাম শম্পা’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ফেনীর সোনাগাজীতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি জানিয়েছেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা প‌রি‌হিত চারজন তাঁর গা‌য়ে আগুন ধ‌রি‌য়ে দেন। ওই চারজ‌নের একজনের নাম ছিল শম্পা।

ঢাকা মেডিকেল ক‌লেজের বার্ন ও প্লা‌স্টিক সার্জারি ইউনি‌ট সূত্র ত‌থ্যের সত্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছে।

দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ওই ছাত্রী একজন চি‌কিৎস‌কের কা‌ছে বক্তব্য দেন।

সূত্র জানায়, ক‌য়েক বছর ধ‌রে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নারী শিক্ষার্থী‌দের হয়রা‌নি ক‌রে আস‌ছেন। তি‌নি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দি‌য়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখা‌তেন। তাঁর কথায় রা‌জি না হ‌লে তি‌নি হেনস্থা ক‌রতেন। আগে এ বিষ‌য়ে প‌রিবার‌কে না জানা‌লেও গত ২৭ মার্চ তাঁর স‌ঙ্গে অধ্যক্ষ অশোভন আচরণ ক‌রেন।

বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী প‌রিবার‌কে জানান, মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থী‌দেরও জানান। অধ্যক্ষের বিরু‌দ্ধে মামলা হওয়ার পর থে‌কে তি‌নি ভাই‌য়ের স‌ঙ্গে মাদ্রাসায় যা‌চ্ছি‌লেন। ঘটনার দিন তাঁর ভাইকে ভেত‌রে ঢুক‌তে দেওয়া হয়‌নি। কেন্দ্রে ঢোকার পর একটা সময় তাঁকে ছা‌দে ডে‌কে নি‌য়ে যাওয়‌া হয়। তি‌নি নেকাব, বোরকা, হাতমোজা প‌রি‌হিত চারজন‌কে দেখ‌তে পান। তাঁ‌দের ম‌ধ্যে মূলত কথা বল‌ছি‌লেন একজন। তি‌নি মামলা প্রত্যাহার ক‌রে নি‌তে ব‌লেন এবং অধ্যক্ষের বিরু‌দ্ধে অভি‌যোগ অসত্য এ কথা বল‌তে চাপ দেন। মাদ্রাসাছাত্রী এতে অস্বীকৃ‌তি জানা‌লে ওই চারজন ওড়না দি‌য়ে তাঁর হাত বেঁধে ফে‌লেন। তাঁর গ‌া‌য়ে ওঁরা কিছু একটা ছু‌ড়ে দেন। তারপর ব‌লেন, ‘যা এবার পালা। ’ গা‌য়ে আগুন লাগা অবস্থা‌তেই তি‌নি দৌঁড়ে পালান।

চারজ‌নের কেউ কারও নাম উচ্চারণ না কর‌লেও কো‌নো একপর্যা‌য়ে একজন শম্পা ব‌লে একজন‌কে ডা‌কেন। তি‌নি যে কণ্ঠ শু‌নে‌ছেন, তা নারীকণ্ঠ। ত‌বে মুখ ঢাকা থাকায় কাউকে চিন‌তে পা‌রেন‌নি ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন।

অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রী বলেন, ওড়নাটা ছাই হয়ে যাওয়ার পর হাতের বাঁধন খুলে যায়।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে মেয়েটিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকেএম এনামুল করিমের সভাপতিত্বে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার গভর্নিং কমিটির সভায় রোববার এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সভায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর চিকিৎসায় দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে শিশু বলাৎকারের ঘটনায় ফেনী সদরের একটি মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, যৌন হয়রানি ও চেক জালিয়াতিসহ ফেনী এবং সোনাগাজী মডেল থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর