প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতক দ্বিখণ্ডিত!

নবজাতকের লাশ। প্রতীকী

প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতক দ্বিখণ্ডিত!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে চিকিৎসকরা। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে গাইবান্ধার সাঘাটার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের নামে।

গত শনিবার উপজেলার বোনারপাড়ার ‘মাতৃসদন কেন্দ্রে’ এ ঘটনা ঘটে।

প্রসূতির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের লিমন মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রশিদা বেগমকে গত শনিবার সকাল ১০টায় প্রসবব্যথা নিয়ে উপজেলার বোনারপাড়ার প্রাইভেট ক্লিনিক ‘মাতৃসদন কেন্দ্রে’ ভর্তি করানো হয়।

সেখানে থাকাকালে ডাক্তার এবং নার্স ছাড়া বিনা চিকিৎসায় সারা দিন ওই ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করে রাখা হয়। এরই একপর্যায়ে প্রসূতির শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিকেল চারটার দিকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মালিক আজগর আলী নিজেই একটি রুমে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানোর চেষ্টা করেন।

একপর্য়ায়ে নবজাতকের পা বের হয়ে আসলে তা ধরে ব্যাপক টানাটানি করা হয়। এতে নবজাতকের মাথা আটকে গেলে গলা থেকে দেহ ছিঁড়ে আসে।

এতে রোগীর ব্যাপক রক্তক্ষরণ হলে বেকায়দায় পড়ে ক্লিনিকের মালিক আজগর আলী প্রসূতিকে গাইবান্ধা অথবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

এদিকে প্রসবের সময় বাচ্চার পা ধরে টানাহেঁচড়া করায় গলা থেকে ছিঁড়ে দেহ আলাদা হয়ে গেলে ছেঁড়া অংশ ভেতরে পুনরায় ঢুকিয়ে দেওয়ায় প্রসূতি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে শনিবার রাত ১০টায় কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই রোগীকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ক্লিনিকের দরজায় তালা লাগিয়ে সটকে পড়ে মালিক আজগর আলীসহ সবাই। প্রসূতি রশিদা বেগমের অভিভাবকরা তাকে নিয়ে তখন জেলা সদরে ‘গাইবান্ধা ক্লিনিকে’ এনে ভর্তি করায়। এখানে চিকিৎসকরা চেষ্টা করে মাথা এবং দেহ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত শিশুটিকে বের করে বাড়িতে দাফনের জন্য পাঠিয়ে দেন।

মাতৃসদন ক্লিনিকের মালিক কথিত চিকিৎসক আজগর আলী বলেন, রোগীর লোকজনের অনুরোধেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করি। তবে আগে থেকেই পেটের ভেতর বাচ্চা মৃত ছিল বলে তার দাবি।

এদিকে ওই প্রসূতিকে গাইবান্ধায় আনার পরে সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেন।

ওই নির্দেশপত্রের উল্লেখ করা হয়, ক্লিনিকটি সরকারি অনুমোদন নেই, কোনো ডাক্তার বা নার্স নেই, ডাক্তার না হয়েও পুরুষ মানুষ অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসা, ডেলিভারি এবং আলট্রাসনোগ্রাম করানোর কাজ করে আসছেন আজগর আলী যা নিয়মবহির্ভূত।

আজগর আলী মূলত একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট উল্লেখ করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টরা কোনোভাবেই নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করতে পারে না।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাঘাটা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর