ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ওই থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঠিক এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিন এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে না নেওয়া, পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর এক আদেশে ওসি মোয়াজ্জেমকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসআই ইকবাল হোসেন নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা চালান। এ কাজে তাঁরা একে অন্যকে সহযোগিতা করেছেন। আর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার সকাল ১০টায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে যাননি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেন।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি কে এনামুল কবীর তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি বলেও মন্তব্য করেছে কমিটি। তাঁর ব্যাপারে কমিটির পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানোর কথা।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহা-পরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।
ওই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি এসএম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোনাগাজী ঘুরে এসে ৩০ এপ্রিল রাতে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল ও এসআই ইউসুফের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল কবিরের বিরুদ্ধেও দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)
