মন্ত্রী-সাংসদ-ডিসির ‘কাছের লোক’ তিনি!

সংগীত শিল্পী মাসুম রেজা

মন্ত্রী-সাংসদ-ডিসির ‘কাছের লোক’ তিনি!

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতির জগতে পরিচিত মুখ ও কথিত সাংবাদিক সৈয়দ মাসুম রেজার বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী অত্যাচার নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন তার স্ত্রী দেশের উদীয়মান টিভি-মঞ্চ অভিনেত্রী ও বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী সাদিকা ইয়াসমিন সান্তনা।

এদিকে মামলা দায়েরের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনের মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সৈয়দ মাসুম রেজা নাটোরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাদী সান্তনা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী গোদাগাড়ি উপজেলার গোগ্রামের মরহুম সাদেক আলীর মেয়ে টিভি ও মঞ্চ অভিনেত্রী সাদিকা ইয়াসমিনকে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিয়ে করেন নাটোর শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সৈয়দ মোহাম্মদ নাসিহর ছেলে সৈয়দ মাসুম রেজা।

এর আগে ২০০৭ সালে লীরা মল্লিক নামে এক সংস্কৃতি কর্মীকে বিয়ে করেন মাসুম রেজা। ৮ বছর সংসার করার পর মাসুমকে ডিভোর্স দেন তিনি।

২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যবসা করার অজুহাত দেখিয়ে যৌতুক হিসেবে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা পাওয়ার পর কিছু দিন চুপচাপ ছিল মাসুম।

২০১৮ সালের ২৮ জুন স্ত্রী সান্তনার বাবা মারা গেলে আবারো ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করে মাসুম। যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে আসামি মাসুম মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এমনকি রাজধানীর রামপুরার বাসায় অসুস্থ অবস্থায় একাকী ফেলে রেখে পালিয়ে নাটোরে চলে আসে। তারপর থেকে তিনি নাটোরে অবস্থান করে স্থানীয়
একটি অনলাইন পত্রিকায় সাহিত্য সম্পাদক এবং টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সন হিসেবে কাজ করার নামে গা ঢাকা দেন।  
নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শুরু করেন।

এদিকে স্ত্রী সান্তনা যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মাসুম তাকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া শুরু করে এবং নিজেকে নাটোরের মন্ত্রী, এমপি, ডিসি, এসপিসহ ক্ষমতাবানদের ঘনিষ্ট লোক বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, মাসুমের বিচার করার ক্ষমতা কারো নেই!

অন্যদিকে সান্তনা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিচার না পাওয়ায় অবশেষে গত ১১ জানুয়ারি ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে সৈয়দ মাসুম রেজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এদিকে মামলার দায়েরের পর ৪মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত আসামি মাসুমকে গ্রেপ্তার না করায় তিনি গত ১৯ মে সান্তনার কর্মস্থল বুলবুল ললিত একাডেমীতে গিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসে। এ ব্যাপারে ২০ মে রাজধানীর রামপুরা থানায় সাধারণ ডাইরী করেন সান্তনা।

বাদী সান্তনা ও তার পরিবার অভিযোগ করেন, পুলিশ আসামিকে না ধরায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামি পক্ষের লোকজন বাদী ও বাদীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ফলে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীতায় আছে।  

জানা গেছে শুধু সান্তনা, লীরা নয়, সমাজের বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত হাইপ্রোফাইল মেয়ের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন মাসুম। তার ফাঁদে পড়ে একাধিক মেয়ের সংসার ভেঙে গেছে। এছাড়া তিনি গণমাধ্যমে কর্মরত বেশ কয়েকজন মেয়ের জীবনকেও বিভিন্নভাবে বিষিয়ে তুলেছেন।

এবিষয়ে মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ মাসুম রেজার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

নাটোর সদর থানার (ওসি) তদন্ত ফরিদুল ইসলাম জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক আইনের মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হলে অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাসিম/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর