দারিদ্রতার যন্ত্রণায় দুই সন্তানকে হত্যা করেছে বাবা 

ছবি সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে এসপি মিরাজ উদ্দিন

দারিদ্রতার যন্ত্রণায় দুই সন্তানকে হত্যা করেছে বাবা 

সুমন বর্মণ, নরসিংদী

আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সন্তানদের ভরণ পোষন ঠিকমতো দিতে না পাড়ার যন্ত্রণার কারণেই নরসিংদীর দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পিতা।

আটকের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে নিহতদের পিতা শফিকুল ইসলাম।

আজ  শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ (বিপিএম)। তবে ঘাতক পিতা শফিকুলকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: বাবাকে কুপিয়ে ২৫ টুকরো করল ছেলে!

নিহতরা হলো মনোহরদী উপজেলার চালাকচর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে তাইন আক্তার (১১) ও তাইবা আক্তার (৪)। আটককৃত শফিকুল ইসলাম একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীর নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ (বিপিএম) বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় নরসিংদী পৌর শহরের লঞ্চ টার্মিনালের টয়লেটে দুই শিশুর লাশ পড়ে আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এবং টয়লেটে দুই শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে।

এদের মধ্যে একজনের বয়স ১২ বছর অপরজনের ৪। পরে তাদের উদ্ধার ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। শুক্রবার রাতেই নিহতের পিতা শফিকুল ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত শফিকুল ইসলাম পুলিশের নিকট হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশ সুপার জানান, মনোহরদীর চালাকচরের গ্রামের বাড়ি থেকে দুই সন্তানকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে শিবপুর নিয়ে আসেন পিতা শফিকুল ইসলাম। চিকিৎসক না থাকায় সে তার সন্তানদের নরসিংদী লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরতে নিয়ে আসেন। ওই সময় তার ছোট মেয়ে তার কাছে লিচু খেতে চান। কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তার উপর সামনে ঈদ।

সংসারের খরচ ও সন্তানদের ঈদের জামা কাপড় দিতে হবে। এসব ভেবে শফিকুল হিতাহিত শূন্য হয়ে যায়। পরে প্রথমে ছোট মেয়েকে লঞ্চ টার্মিনালের বাথরুমে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বড় মেয়েকে একই কায়দায় হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা দায়ের করেনি। পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে তিনি জানান।

তিনি আরও জানায়, প্রাথমিক ভাবে শফিকুল ইসলামকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে। সে একেক বার একক রকম কথা বলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চালাকচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল মান্নান মুক্তু বলেন, অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামের বাবা-মা শিক্ষক ছিল। তাদের সংসারে অভাব অনটন ছিল এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। এলাকায় ভাল ছেলে হিসেবেই আমরা দেখেছি। কিন্তু কি কারণে কেন নিজের দুই সন্তানকে হত্যা করেছে তা আমরা ভেবে পাচ্ছি না।

ঘাতক নিরাপত্তা প্রহরী পিতার দারিদ্রতার প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম নরসিংদীতে ভাড়া বাসায় থাকত। ফলে তার আয়ের বড় একটি অংশ ভাড়ায় ব্যয় হয়ে যেতো।

ফলে বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালানো তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। পাশাপাশি তার যতটুকু না অভাব তারচেয়ে বেশী সে অভাব অনুভব করত। এসব মানসিক যন্ত্রণা থেকেই সে নিজের সন্তানদের হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর