পাকিস্তানের কাছে প্রথম হারের স্বাদ পেল নিউজিল্যান্ড

ছবি সংগৃহীত

পাকিস্তানের কাছে প্রথম হারের স্বাদ পেল নিউজিল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক:

দারুণ বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালে রেখেছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। রান তাড়ায় দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করলেন বাবর আজম। টানা দ্বিতীয় ফিফটি করলেন হ্যারিস সোহেল। তাতে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে বুধবার ৪৬ রানে ৪, ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে তারা শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে করে ২৩৭ রান।

ছয় নম্বরে নেমে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন জেমস নিশাম। ষষ্ঠ উইকেটে তিনি কলিন ডি গ্রান্ডহোমের সঙ্গে গড়েন ১৩২ রানের জুটি।

গ্র্যান্ডহোম করেন ৬৪ রান। কেন উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান। আফ্রিদি নেন ৩ উইকেট।

জবাবে পাকিস্তান লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাঁচ বল বাকি থাকতে। ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন বাবর। হ্যারিস করেন ৬৮ রান। চতুর্থ উইকেটে ১২৬ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়েন এই দুজন।

সপ্তম ম্যাচে তৃতীয় জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয় নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশেরও সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে পাঁচে আছে বাংলাদেশ। প্রথম হারের স্বাদ পাওয়া নিউজিল্যান্ড সাত ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে।

সকালের বৃষ্টিতে আউটফিল্ড ভেজা থাকায় ম্যাচ শুরু হয়েছিল এক ঘণ্টা দেরিতে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে মোহাম্মদ হাফিজকে প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেছিলেন মার্টিন গাপটিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ আমিরের প্রথম বলেই ফেরেন টুর্নামেন্টজুড়ে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হওয়া কিউই ওপেনার। ৫ রান করা গাপটিল অফ স্টাম্পের ফুল লেংথ বলে টেনে আনেন স্টাম্পে।

আমিরের দেখানো পথ ধরে নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন আফ্রিদি। তরুণ বাঁহাতি পেসার নিজের চার ওভারের মধ্যে সাজঘরে ফেরান তিন ব্যাটসম্যানকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন কলিন মানরো (১২)। উইকেটকিপার সরফরাজ আহমেদের দারুণ ক্যাচে ফেরেন রস টেলর (৩)। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন টম ল্যাথামও (১)।

তখন ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে নিউজিল্যান্ড। তখনো এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক উইলিয়ামসন। পঞ্চম উইকেটে তিনি নিশামের সঙ্গে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।

দুজন গড়ে ফেলেছিলেন ৩৭ রানের জুটি। এরপরই দারুণ এক ডেলিভারিতে উইলিয়ামসনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার শাদাব খান। ৬৯ বলে ৪ চারে উইলিয়ামসন করেন ৪১ রান।

এরপরই ইনিংসে নিজেদের সেরা সময়টা কাটায় নিউজিল্যান্ড। পাল্টা আক্রমণে উল্টো পাকিস্তানের বোলারদের ওপর চাপ ফিরিয়ে দেন নিশাম ও গ্র্যান্ডহোম। দুজনই তুলে নেন ফিফটি। নিশাম ৭৭ বলে, গ্র্যান্ডহোম ৬৩ বলে। দুজনের জুটির শতরান পূর্ণ হয় ১১১ বলে।

দলের স্কোর দুইশ পার করে ফেরেন গ্র্যান্ডহোম। ৭১ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৬৪ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ বলে ওয়াহাব রিয়াজকে ছক্কায় উড়িয়ে ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাম। ১১২ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

১০ ওভারে ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার আফ্রিদি। আমির ৬৭ রানে ও শাদাব ৪৩ রানে নেন একটি করে উইকেট। ৫৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন ওয়াহাব।

লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই ফেরেন ফখর জামান (৯)। ট্রেন্ট বোল্টকে লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় পয়েন্টে গাপটিলের হাতে।

থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হক (১৯)। লোকি ফার্গুসনের বাউন্সারে তিনি ফেরেন পয়েন্টে গাপটিলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে। তখন ৪৪ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পাকিস্তান।

তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন বাবর ও হাফিজ। দুজন দলের স্কোর পার করেন একশ। ৬৬ রানের জুটিটাও বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু হাফিজ পার্ট-টাইমার বোলারদের উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন এদিনও।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যারন ফিঞ্চ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এইডেন মার্করামের পর হাফিজ এবার উইকেট দেন উইলিয়ামসনকে। ৫০ বলে ৫ চারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান করেন ৩২ রান।

পরের গল্পটা বাবর ও হ্যারিসের। দুর্দান্ত এক জুটিতে পাকিস্তানকে জয়ের কাছে নিয়ে যান দুজন। এর মাঝেই বাবর তুলে নেন ক্যারিয়ারের দশম ও বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি।

জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে রান আউট হওয়া হ্যারিস ৭৬ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ৬৮ রানের ইনিংস। ম্যাচসেরা হওয়া বাবর ১২৭ বলে ১১ চারে সাজান তার ১০১ রানের ইনিংসটি।

সম্পর্কিত খবর