বরগুনার ঘটনায় সীমান্তে রেড অ্যালার্ট

স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কোপাচ্ছে দুই সন্ত্রাসী, পরে তার মৃত্যু হয়

বরগুনার ঘটনায় সীমান্তে রেড অ্যালার্ট

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামিরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারির কথা বলেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষকে এই বার্তা পুলিশপ্রধানকে (আইজিপি) জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এই আদেশ দেন।

কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি গণমাধ্যমে আসার পর আজ সকালে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস।

এরপর এই ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না বা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আজ বেলা দুইটায় আদালতকে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন।

মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদালতকে বলেন, আদালতের মৌখিক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা হয়েছে। সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।

নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। চন্দন নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রত্যেকের বাড়ি ও সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
 
আদালত বলেন, মূল আসামি তো গ্রেপ্তার হচ্ছে না। যেহেতু গতকাল দুপুরে ঘটনাটি প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটেছে তাই এর অ্যাকশন দ্রুত হওয়া উচিত ছিল।
 
পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল এ বিষয়ে আদেশ চাইলে আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিচ্ছি না। কিন্তু কোনো অনিয়ম বা অবহেলা আছে কিনা আমরা নজরে রাখব ও এ বিষয়টি আগামী বৃহস্পতিবার আবার আসবে, আমরা অগ্রগতি জানাব।
 
এর আগে সকালে আদালত বলেন, ‘প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষটাকে মারল। একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে আসল না। জনগণকে আপনি কী করবেন? বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। ভিডিও করল, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসল না। এটি জনগণের ব্যর্থতা। তাই এই সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবে কে? দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ প্রতিবাদ করল না। পাঁচজন মানুষ অন্তত এগিয়ে আসলে হয়তো তারা সাহস পেত না। হয়তো তারা (দুর্বৃত্তরা) ক্ষমতাবান, হয়তো মানুষ ভয়ে এগিয়ে আসেনি। ’

এ সময় আদালত জানতে চান, মামলা হয়েছে কি না। উপস্থিত এক আইনজীবী বলেন, নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে ওই তথ্য বেলা দুইটায় আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, রিফাত শরীফ গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত রিফাত শরীফ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে।

অভিযোগ ওঠা যুবকদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ফরাজী নামের দুজনের নাম বলতে পেরেছেন নিহত যুবকের বন্ধুরা।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর