দুধে মিলল ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক

বিভিন্ন কোম্পানির দুধ

দুধে মিলল ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

পাস্তুরিত তরল দুধে ফের ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মিলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার দ্বিতীয় দফায় এ পরীক্ষা চালায়। এবার দুধের ১০টি নমুনার ১০টিতেই ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।

অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হলো- অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন।

শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান ঢাবির বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম দফায় দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গিয়েছিল। গত সপ্তাহে আমরা এই পরীক্ষাটি আবার সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও আগের পাঁচটি কোম্পানির পাস্তুরিত প্যাকেটবদ্ধ দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত সাতটি নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত তিনটি নমুনা সংগ্রহ করি।

এরপর অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

পরীক্ষার পর দেখা যায়, ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পরীক্ষায় যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ধরা পড়ে সেগুলা হলো- অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন। এর মধ্যে আগের বারে ছিল না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি।

সেগুলো হলো- অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন। ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে চারটি, ছয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তিনটি এবং একটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি।

অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, আগামীতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশের চেষ্টা করব। আশা করি, এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলো দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবে এবং এভাবে দেশের দুধের মানের উন্নতি ঘটবে। এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোনও সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না। "

এর আগে, গত ৯ জুলাই হাইকোর্ট দুধ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়- এমন প্রতিবেদন ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে পণের মান ও গুণাগুণ নির্ধারণকারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) নির্দেশ দিয়েছে।

আদালত ৯ জুলাই শুনানিকালে বিএসটিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে আমরা কোনও আদেশ দেইনি, মতামতও প্রকাশ করিনি। অথচ আপনি মিডিয়ার সামনে আদালতের সন্তোষ প্রকাশের কথা বললেন। আপনার এই বক্তব্যের পর প্রাণ গ্রুপ গণমাধ্যমে হাইকোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের পণ্যের গুণগান প্রচার করছে। এই দুধ খেয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয়, তার দায় কে নেবে?’

পরে আদালত তাদের আদেশ ছাড়া কোনো বক্তব্য গণমাধ্যমের সামনে না দিতে বিএসটিআইয়ের আইনজীবীকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।

এর আগে গত ৮ জুলাই পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের দেয়া প্রতিবেদন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দাখিল করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়-বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল ধরা পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।

এই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। ওই রিট আবেদনে গত বছরের ২১ মে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। খাদ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে দেওয়া এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনও কিছুই পাওয়া যায়নি।

কিন্তু একইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার ‘সলিড নট ফ্যাট’ পাওয়া যায়নি। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ ৩.৫ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এগুলোতে আছে ৩.৬ থেকে ৩.৬১ শতাংশ। এসব দুধে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক  সম্মেলনে বলেন, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা।

পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই লেভোফ্লক্সাসিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ছয়টি নমুনায় এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।  

এছাড়া পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের চারটি নমুনাতে ডিটারজেন্ট এবং অপাস্তুরিত দুধে একটি নমুনাতে ফরমালিন পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা জানিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ড. আ ব ম ফারুকসহ গবেষকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।

গত ৯ জুলাই রাজধানীর খামার বাড়িতে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর মিলনায়তনে ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন: দেশীয় দুগ্ধশিল্প রক্ষা ও বিকাশে করণীয়’ শিরোনামে এক সভায় এই হুমকি দেন তিনি।

সরকারের এই কর্মকর্তার মতে, এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশে প্রটোকল মানা হয়নি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর