আমার শ্বশুর অসুস্থ: মিন্নি

মিন্নির সংবাদ সম্মেলন

আমার শ্বশুর অসুস্থ: মিন্নি

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

রিফাত কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের আড়াল করতে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। সেই সঙ্গে তাকে (মিন্নি) গ্রেপ্তারের দাবি জানানোয় শ্বশুর দুলাল শরীফকে অসুস্থ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৪ জুলাই) নিজ বাড়িতে মিন্নি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এর আগে গত শনিবার রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ সংবাদ সম্মেলন করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার ছেলে হত্যার ঘটনায় পুত্রবধূ মিন্নির ইন্ধন রয়েছে।

মিন্নি বলেন, প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতেই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমার শ্বশুর অসুস্থ। তিনি কখন কী বলেন তার কোনো ঠিক নেই।

তিনি বলেন, আমার শ্বশুরকে দিয়ে কোনো মহল স্বার্থ হাসিল করার জন্য আমাকে পেচিয়ে মামলাটি হালকা করার চেষ্টা করছে। যাতে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। আর আমার যদি নয়নের সঙ্গে বিয়েই হবে তবে যখন রিফাতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তখন নয়ন কেনো বাধা দেয়নি।

এ সময় তিনি অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন।

এর আগে গত শনিবার  সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুত্রবধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।

তার অভিযোগ, রিফাত হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মিন্নি প্রতিদিন একাই কলেজে যেতেন। ঘটনার দিনও তিনি একা কলেজে গিয়েছিলেন। এরপর মিন্নি ফোন করে রিফাতকে কলেজে ডেকে নেন।

আবদুল হালিমের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে হওয়া বিয়ের কথা গোপন করেছিলেন মিন্নি ও তাঁর পরিবার। নয়নকে তালাক না দিয়েই তিনি (মিন্নি) রিফাতকে বিয়ে করেন। তাঁর ভাষ্য, বিয়ের পরেও মিন্নি নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন।

আবদুল হালিম শরীফ সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, নিহত নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগম বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মিন্নি ঘটনার আগের দিনও তাঁর বাসায় গেছেন এবং নয়নের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ ছাড়া ঘটনার পর নতুন করে প্রকাশ পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কলেজ গেট থেকে রিফাত শরীফকে ধরে নেওয়ার সময় মিন্নি নির্লিপ্ত ছিলেন। এরপর কুপিয়ে জখম করার পর মিন্নি রিফাতকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে নিজের জুতা খুঁজছিলেন এবং আক্রমণকারীদের একজন তাঁর (মিন্নি) হাতব্যাগ তুলে দিচ্ছিল। আবদুল হালিম বলেন, এতগুলো তরুণ রিফাতের ওপর হামলা চালাল অথচ একটি আঘাতও মিন্নির শরীরে লাগল না —এটা রহস্যজনক।

আবদুল হালিম বলেন, রিফাত রক্তাক্ত অবস্থায় একাই রিকশায় করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যান। এরপর যখন গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল নেওয়া হয় তখন মিন্নি তাঁর সঙ্গে যাননি।

আবদুল হালিম আরও বলেন, ‘আমার প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব ক্ষেত্রে মিন্নির ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় বইলেও কেন তাঁকে (মিন্নি) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির কাছে দাবি জানাই, অবিলম্বে মিন্নিকে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আর সেটা করা হলেই রিফাত শরীফ হত্যার মূল রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে’

এ ব্যাপারে শনিবার মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার মেয়েকে নিয়ে নেতিবাচক নানা মন্তব্য ও খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। এ কারণে সে (মিন্নি) সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাই তাকে আজ (শনিবার) চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকের পরামর্শ তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। ’

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

‘রিফাত হত্যায় মিন্নি জড়িত’

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর