‘দুধ নিয়ে কোনো অজুহাত নয়’

পাস্তুরিত দুধ

‘দুধ নিয়ে কোনো অজুহাত নয়’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বাংলাদেশের উচ্চ আদালত স্পষ্ট করেই বলেছেন, দুধ নিয়ে কোনো অজুহাত দেখতে চাই না, আমরা চাই বিশুদ্ধ দুধ।

এছাড়াও ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।

বাজারের ১১টি পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে এর ১০টিতেই অতিরিক্ত মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে জানিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আজ (মঙ্গলবার) হাইকোর্টে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তালিকায় থাকা এই ১০টি পাস্তুরিত দুধ হলো- মিল্ক ভিটা, ডেইরী ফ্রেশ, ঈগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং, প্রাণ মিল্ক, পিউরা ও সেফ ব্র্যান্ড।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ রিপোর্ট দাখিলের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুধে ভেজাল মোকাবেলায় সোস্যাল একটি ফান্ড তৈরি করার নির্দেশ দেয়।

এ প্রসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী জানান, দুধে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সাত দিনের মধ্যে জানাতে দির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো গাভীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না বলেও আদালত বলেছেন।

এর আগে গত (রোববার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে আলেচনা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয় দু’দফায় তাদের পরীক্ষিত দুধের দশটি নমুনাতেই ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে শিশুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রওশন আরা বলেন, দুধে মিশ্রিত এন্টিবায়োটিক শিশুর শরীরে প্রবেশের কারণে সে শিশুর দেহে অন্য কোনো রোগ সংক্রমনের বেলায় এন্টিবয়োটিক কার্যকর হয় না। বাংলাদেশে এখন এন্টিবায়োটিক অকার্যকরিতার যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার পেছনে এটাও একটা কারণ।

তিনি বলেন, দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। সবগুলো খাদ্য উপাদান এতে আছে বলেই সব বয়সী মানুষ বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিরাপদ দুগ্ধ সরবরাহ নিশ্চিত করা জনস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত প্রয়োজন।  

দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য পরীক্ষায় উন্নত দেশগুলোতে ২৩ থেকে ৩০টি প্যারামিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বিএসটিআই ১৭ বছর আগে নির্ধারিত ৯টি প্যারামিটার ধরে দুধ পরীক্ষা করে।

আদালতে বিএসটিআই’র আইনজীবী স্বীকার করেছেন, পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্ট পরীক্ষার কোনো পদ্ধতিই সংস্থাটির নেই।

এ পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আইসিসিডিডিআরবিসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে এমন চারটি ল্যাবে পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের তৈরি করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদটি গত ১০ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

পরে আদালত দুধে সীসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল আদালত। এছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এদিকে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য পরীক্ষায় ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিএসটিআই। সংস্থাটির গবেষণা প্যারামিটার আরো যুগোপযোগী করতে এই কমিটি কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির আইনজীবী। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে। দ্রুত বিচার আইনে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর