কর্মচঞ্চলতা ফিরছে রাঙামাটি মৎস্যজীবীদের

কর্মচঞ্চলতা ফিরছে রাঙামাটি মৎস্যজীবীদের

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

প্রস্তুত নৌকা, জাল ও বড়শি। এবার মাছ শিকারের পালা। কিন্তু নির্ধারিত সময় এখনও আসেনি। তবুও কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে বসে আছে শত শত জেলে।

৩১ জুলাই (বুধবার) ঠিক মধ্যরাতে শুরু হবে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার উৎসব। তাতেই উচ্ছাসে উৎফুল্ল মৎস্যজীবীরা। টানা তিন মাস পর ফিরছে তাদের কর্মচঞ্চলতা। তাই আনন্দের প্রতিচ্ছবি ভাসছে জেলে পরিবারের চোখে মুখে।

মৎস্যজীবীরা জানান, টানা তিনমাস বন্ধ ছিল রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার। এতে বেকার জীবন কাটে হাজারো মৎস্যজীবীদের। কর্মহীন মানুষগুলোর জীবনে নেমে আসে দুর্ভিক্ষ। টাকা-পয়সার অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করতে হয় তাদের। তবুও মেনে নিয়েছিল এ নিয়ম। কারণ বন্ধকালীন সময় বৃদ্ধি পায় মাছের প্রজনন শক্তি। মা মাছেরা নিরাপদে তাদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। এর মধ্যে বড় হতে থাকে ছোট পোনা মাছগুলো। আর তিন মাস পর পাওয়া যায় এ কষ্টের সুফল। তাই এবার কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ হবে বলে ধারণা করছেন মৎস্যজীবীরা।

রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, আগামী ১ আগস্ট রাঙামাটি ফিসারিতে মাছ আসা শুরু হবে। এখান থেকে সরবরাহ হবে দেশের বিভিন্নস্থানে। তবে ৩১ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হবে এ মাছ শিকার। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বরফকলগুলো।

তবে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও পাঁচটি অভয়াশ্রমে কোনও ধরনের মাছ শিকার করা যাবে না। এ পাঁচটি অভয়াশ্রম হলো- ফিশারিঘাটের সম্মুখে হ্রদাংশের দুই বর্গকিলোমিটার, লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়সংলগ্ন দুই বর্গকিলোমিটার, জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাংলোসংলগ্ন ১২ বর্গকিলোমিটার, রাঙামাটি বনবিহার এলাকাসংলগ্ন ৫৩ দশমিক ৫০ একর এলাকা এবং নানিয়ারচর উপজেলার ছয়কুড়ি বিলের ২০০ একর এলাকা পর্যন্ত।

এছাড়া হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন সম্পন্ন হয়েছে বিধায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে শর্তসাপেক্ষে জেলেদের মৎস্য আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে কেবলমাত্র বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙামাটি জেলা দফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ এবং আহরিত মাছের শুল্ক প্রদান করে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার ও আহরণ করা যাবে।

এর আগে গত ২৫ জুলাই রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিএফডিসি ও জেলা প্রশানের এক বিশেষ সভায় রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার উন্মুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, চলতি বছরের ১ মে দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামটি কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বংশবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এখন তিন মাসপূর্ণ হবার পর আবারও কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর