পর্যটকের আনন্দ উৎসবের কলাবাগান ঝর্ণা

প্রতীকী ছবি

পর্যটকের আনন্দ উৎসবের কলাবাগান ঝর্ণা

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটি কলা বাগান ঝর্ণা। এটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন অবস্থিত। এ ইউনিয়নের আশ-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া। এ পাহাড়ি ছড়ার একমাত্র উৎপত্তিস্থল ঘাগড়া ঝর্ণাটি।

যা সবার কাছে আপাতত ‘কলাবাগান’ ঝর্ণা নামে পরিচিত।

এখানে শুধু দেশি-বিদেশেী পর্যটক নয়, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ আশপাশের জেলার স্থানীয়দের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ারমত। কলা বাগান ঝর্ণা স্থল এখন যেন আনন্দ উৎসবের ফোয়ারা। ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও এ ঝর্ণাকে ঘিরে এখনো গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন কেন্দ্র।

পর্যটকরা বলছেন, এ ঝর্ণাটি রক্ষণাবেক্ষণা করা গেলে, এটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে রাঙামাটির সম্ভাবনাময় অণ্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে হলেও গাড়ি থেকে নেমে ছড়ার পথে হাটতে হয় আরও চার কিলোমিটার। কিছুটা সামনে এগুলেই দেখা মিলে ঝর্ণার স্বচ্ছ জল। অসংখ্য ছোট-বড় পথরের গা ঘেষে সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলেছে স্রোতধারা। এ ঝর্ণার শীতলতায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে পর্যটকরা। দুর হয়ে যায় সমস্ত ক্লান্তি।  

দু’পাহাড়ের পথ ধরে হাটলে দেখা মিলবে এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়। আর এ পাহাড়ের বুক চিরে আছড়ে পড়ছে প্রবহমান সুরূল জলধারা। ঝর্ণা-পাহাড়ের সখ্যতায় হৃদয় নিংড়ানো সৌন্দর্য মিলবে এখানে। এ ঝর্ণার কলকল নিক্কন ধ্বনির উচ্ছাস ছড়িয়েছে চারপাশে।

যেন সবুজ অরণ্যের প্রাণের পরশ এঁকেছে কেউ। ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষ। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদাভারে মুখরিত হয়ে থাকে ঝর্ণা স্পট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, র্দীঘ বছর ধরে রাঙামাটির সুবলং ঝর্ণার পরিচিতি থাকলেও, নতুন করে পর্যটকদের আকর্ষণ কেড়েছে ঘাগড়া ঝর্ণা। বহু আগেই স্থানীয়দের কাছে এ ঘাগড়া কলা বাগান ঝর্ণার পরিচিতির বিস্তৃতি ঘটলেও নিরাপত্তার অভাবে এখানে যেতে পার তো না কেউ। কিন্তু প্রকৃতির টানে সমস্ত বাধা বিপত্তি পিছু ঠেলে ঝর্ণা স্পটে ভিড় জমাছে স্থানীয়সহ দেশি-বিদেশী পর্যটকরা।  


এ ব্যাপারে কথা হয় বন্ধুদের সাথে কলা বাগান ঝর্ণা ঘুরে আসা স্থানীয় পর্যটক সৈকত আহমেদ ও আরিয়ান মাহামুদ ইম্মির সাথে। তিনি বলেছেন, কলা বাগান ঝর্ণাটির চারদিক ঘিরে রেখেছে সবুজ পাহাড়। তাকালেই দু’চোখ জুড়ে দৃষ্টি কাড়ে। জুড়িয়ে যায় হৃদয়-মন। যা না দেখলে কল্পনাতে আল্পনায় আঁকা যাবে না ছবি। যা সত্যি আকর্ষণীয়।  

তবে পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ঝর্ণা স্থলে পৌছাতে হলে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পানির স্রোতে পা পিছলে পড়ারও সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া অন্যকোন সমস্যা নেই এখানে। তবে এ ঝর্ণা স্পটের আশপাশে প্রশাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে, পর্যটকদের উপস্থিতি আরও বাড়তো এখানে।  

অন্যদিকে, ঘাগড়া কলাবাগান ঝর্ণাটি নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান রাঙামাটির স্থানীয় প্রশাসনও।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ও মোটেলের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ূয়া বলেছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিক সৃষ্টি রাঙামাটি। এ অঞ্চলের একমাত্র আকর্ষণ হ্রদ-পাহাড় আর ঝর্ণা বৈচিত্রতা। যার টানে এখানে প্রায় প্রতিদিন আসছে দূর-দুরান্তের হাজারো পর্যটক।

কিন্তু পর্যটকদের জন্য তেমন সুযোগ সুবিধা এখানে গড়ে উঠেনি। যার কারণে এ জেলা থেকে পর্যকদের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। রাঙামাটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এখানে ব্যাপক পরিকল্পনা প্রয়োজন। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঢেলে সাজানো গেলে, এ জেলা প্রতিনিয়ত মুখরিত থাকবে দেশি বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায়।  

অভিযোগ রয়েছে, রাঙামাটির ঝর্ণাগুলো ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক ঝর্ণা।  


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর