চেন্নাইকে ৩-২ গোলে হারাল বসুন্ধরা কিংস

অনলাইন ডেস্ক

বসুন্ধরা কিংস সমর্থকদের জন্য ম্যাচটা শ্বাসরুদ্ধকর। জয়ের কোন বিকল্প নেই। হারলেই খাদের একেবারে কিনারে এসে যাবে। সামান্য বাতাসেই খাদে পড়ার ভয় থাকবে।

এই কারণেই জয়টা ছিল খুব প্রয়োজন। কাঙ্খিত সেই জয় পেল বসুন্ধরা কিংস। তবে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে তাদেরকে।  

ম্যাচের শেষদিকের গোলে ৩-২ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে অস্কার ব্রুজোনের দল।

এ জয়ে সেমিফাইনালের আশা বেঁচে রইল বসুন্ধরা কিংসের। তবে শেষ ম্যাচে তেরেনগানুর বিপক্ষেও জয় প্রয়োজন পেশাদার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।

ম্যাচটা ভালভাবেই শুরু হয়েছিল। দুই দলেরই লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। শুরু থেকেই তাই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলছিল। কিন্তু চেন্নাই সিটি এফসির যুদ্ধাংদেহী মনোভাবে নিজেদের পরিকল্পনা মাঠে ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে পারছিলেন না ড্যানিয়েল কলিনড্রেসরা। ম্যাচের ভয়াবহতার চিত্র পূর্ণরূপে বিকশিত হয় ২৩ মিনিটে।  

এক ফাউলকে কেন্দ্র করে রেফারির সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হন চেন্নাই সিটি এফসির জাপানি ফুটবলার কাতসুমি ইউসা। এরপর তিনি সাইডলাইনের দিকে এগিয়ে এসে বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোনের সঙ্গেও তর্কে লিপ্ত হন। অফিশিয়ালরা দুজনকে দুইদিকে নিতে গেলে কাতসুমি মাঠ ছেড়ে এসে চতুর্থ রেফারির টেবিলে লাথি মেরে তা মাটিতে ফেলে দেন।  

এরপর কী মনে করে দ্রুত গতিতে দৌড়ে মাঠে প্রবেশ করে লঙ্কান রেফারি লাকমলের দিকে ছুটে যান। রেফারি দুজন ফুটবলারের আড়ালে লুকিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। পরে অন্যরা কাতসুমিকে দূরে সরিয়ে আনেন। কিংস অধিনায়ক কলিনড্রেস কাতসুমিকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন। ২৩তম মিনিটে ঘটনা ঘটলেও রেফারিকে লাল কার্ড দেওয়ার জন্য দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়।

এমনকি ম্যাচ কমিশনার মাহেস বিসতাও ঘটনাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ৩৩ মিনিটে কাতসুমিকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এরও তিন মিনিট পর খেলা শুরু হয়। ১৬ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। এ কারণেই প্রথমার্ধ শেষ হয় ৫৮ মিনিট খেলা হওয়ার পর। মজার ব্যাপার হলো দুই কোচও বিতর্কে জড়িয়ে লাল কার্ডের ইশারায় মাঠ ছাড়েন প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে।

বসুন্ধরা কিংস নিজেদের পরিচিত ফরম্যাটেই খেলতে নেমেছিল। ৭ম মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। বখতিয়ারের হেডে বল ডান পায়ে রিসিভ করে বাম পায়ের ভলিতে সুন্দর গোল করেন লেবানিজ ফুটবলার মোহাম্মদ জালাল। তবে ৪৩ মিনিটে কিংসের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথের ভুলে গোলমুখে শট নেন মাসুরশেরিফথাঙ্গালা। তার শটটা জিকো ফেরালেও ডান দিক থেকে পেদ্রো মানজি এসে সহজেই গোল করেন।

৫৯ মিনিটে ইমন বাবুর পাসে বল পেয়ে ডি বক্সের ডান দিক থেকে ক্রস দেন কলিনড্রেস। হেডে গোল করেন বখতিয়ার। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। তবে ম্যাচের রোমাঞ্চ তখনো অনেক বাকি। ৬৮ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের পর লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন চেন্নাইয়ের রবার্তো সুয়ারেজ।  

এর ঠিক তিন মিনিট পর কিংসের ডিফেন্ডার ফয়সালের ভুলে বল পেয়ে সাইড ভলিতে গোল করেন মাসুরশেরিফথাঙ্গালা। ম্যাচটা ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছিল। তবে ৮৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রবিউলের জোরাল শট চেন্নাইয়ের গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলে বল পেয়ে সহজেই গোল করেন জালাল। কিংসের জয় নিশ্চিত হয়।

এই ম্যাচে দুই দলের পক্ষ থেকেই অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ল ডিসিপ্লিন কমিটির বাকসে। রেফারির দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়লেন দুই দলের সহকারী কোচ। ম্যাচের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন লঙ্কান রেফারি লাকমাল বিরাক্কডি। তিনটি সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়েছেন তিনি। ডাবল হলুদ কার্ডের পর একজনকে দিয়েছেন লাল কার্ড। উত্তপ্ত এক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন লাকমাল। আলোচনায় তো থাকবেনই!