ডায়াবেটিস ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ডায়াবেটিস কী, কেন হয়, লক্ষণসমূহ ও করণীয়

ডায়াবেটিস ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

অনলাইন ডেস্ক

বিপাকজনিত একটি রোগ ডায়াবেটিস। মানবশরীরে ইনস্যুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পরবর্তীতে প্রস্রাবের সঙ্গে তা বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে বলা হয় ডায়াবেটিস।  

এই রোগে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দীর্ঘস্থায়ীভাবে বেড়ে যায়।

সুস্থ লোকের রক্তে প্লাজমায় অভুক্ত অবস্থায় গ্লুকোজের পরিমাণ  ৫.৬ মিলি মোলের কম এবং খাবার দু'ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলি মোলের কম থাকে। অভুক্ত অবস্থায় রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ৭.১ মিলি মোলের বেশি হলে অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দু'ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলি মোলের বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।


ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ
ডায়াবেটিস রোগের খুব স্বাভাবিক কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে ডায়াবেটিস খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ হলো:

১. চোখে ঝাপসা দেখতে পাওয়া
২. ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া 
৩. নিয়মিত খাওয়ার পরেও ঘন ঘন খিদে পাওয়া 
৪. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
৫. প্রচণ্ড ক্লান্ত অনুভব করা
৬. প্রায়ই হাতে-পায়ে ব্যথা করা বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া
৭. শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে শুকিয়ে না যাওয়া
৮. বার বার তেষ্টা পাওয়া


ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণসমূহ

যেকোনো সময় যেকোনো বয়সে যে কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তবে নিম্নোক্ত শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে:
১. বংশগতভাবে অর্থাৎ যাদের বংশে বিশেষ করে বাবা-মা বা রক্তের সম্পর্কিত নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
২. যারা বহুদিন ধরে কর্টিসোল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে আসছেন।
৩. যাদের ওজন অতিরিক্ত বেশি এবং যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ করেন না।  
৪. যাদের রক্তচাপের সমস্যা আছে এবং রক্তে কোলেস্টেরল বেশি।  
৫. যেসব মহিলার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ছিল এবং পরবর্তীতে আবার যেসব মহিলা ৯ পাউন্ডের বেশি ওজনের বাচ্চা প্রসব করেছেন।   

 

ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে কী ধরণের জটিলতা হতে পারে?

১. পাতলা পায়খানা, যক্ষ্মা, মাড়ির প্রদাহ, চুলকানি, ফোঁড়া, পাঁচড়া ইত্যাদি হয়। তাছাড়া রোগের কারণে রোগীর যৌনক্ষমতা কমে যায়।  
২. মহিলাদের ক্ষেত্রে অকালে সন্তান প্রসব, মৃত শিশুর জন্ম, বেশি ওজনের শিশু জন্ম, জন্মের পরেই শিশুর মৃত্যু এবং নানা ধরনের জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  
৩. পক্ষাঘাত স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, হৃদরোগ, চক্ষুরোগ, পায়ে পচনশীল ক্ষত, প্রস্রাবে আমিষ বের হওয়া ও পরবর্তীতে কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পায়।  


ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি?
ডায়াবেটিস ধরা পড়লে চারটি নিয়ম মেনে চলতে হয়-
১. খাদ্য ব্যবস্থা
২. সাধ্যমতো কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম
৩. ডায়াবেটিস সম্পর্কিত শিক্ষা
৪. ওষুধ 


খাদ্য ব্যবস্থা:
ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। এটি মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্বাস্থ্য ভালো রাখা।

খাদ্য গ্রহণের নীতি 

১. চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে।
২. শর্করাবহুল খাবার বেশ হিসাব করে খেতে হবে।
৩. শরীরের ওজন বেশি থাকলে কমানো বা কম থাকলে বাড়িয়ে স্বাভাবিক করতে হবে এবং স্বাভাবিক থাকলে সেটা বজায় রাখতে হবে।
৪. ক্যালরিবহুল খাবার নির্দেশিত পরিমাণে খেতে হবে।  
৫. আঁশবহুল খাবার বেশি করে খেতে হবে।
৬. নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে।  
৭. কোনো বেলার খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না।
৮. আজ কম, কাল বেশি এভাবে খাওয়া যাবে না।
৯. সম্পৃক্ত ফ্যাট কম খেতে হবে এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাট খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/ডিএ