'এ্যালা হামরা খামো কি?'

'এ্যালা হামরা খামো কি?'

কুড়িগ্রামের হাতিয়ায় গৃহহীন পরিবার
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

“এই নদী হামার জমির আধা-পাকা ধান ভাঙি নিয়া যাবার নাগছে। উপায় না দেকি সেই ধান কাটপের নাগছি। এ্যালা হামরা খামো কি?” কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নীলকন্ঠ গ্রামের মৃত মংলা মিয়ার পুত্র আজিজার (৪৮) আক্ষেপ করে জানালেন এসব কথা।  

তার ২৪ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮ লাগিয়েছিলেন তিনি।

ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে জমি ভেঙে যাওয়ায় আধাপাকা ধান কেটে রাখছেন তিনি। যে ধান ১০/১২ দিন পর সম্পূর্ণরূপে পেকে যেত। উপায় না পেয়ে ওই গ্রামের ফজলু, মোসলেম, ছাইদুর, জামাল উদ্দিন, মোশেফুর, মমেনা, সেকেন্দার ও আব্দুল হাই একই কাজ করছেন।

গত দুই-আড়াই মাস ধরে এই এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি সপ্তাতে শত-শত বিঘা আবাদিজমি, গাছপালা ও ২৫টি বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় গৃহহীনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত ভাঙনকৃত স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবি স্থানীয়দের। কিন্ত তাদের কথা শোনার কেউ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও লাভ হয়নি কোনো।

ভাঙন কবলিত এলাকার হালিমা, বাচ্চু, নিরাশা বেওয়া জানান, এই ইউনিয়নে পালেরভিটা, নীলকণ্ঠ, হাতিয়া গ্রাম, নয়াডারা, কামারটারী, নয়াবশসহ ৬টি গ্রামে ৩ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী ভাঙন চলছে। গত দেড় মাসে দুই শতাধিক বসতবাড়ী, কয়েকশ একর আবাদিজমি, গাছপালা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গ্রামের ৩০/৪০ জন লোক জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে নদী ভাঙন রোধে কথা বলতে গেলেও মেলেনি কোন আশ্বাস বা প্রতিকার।

ভাঙন কবলিত এলাকার মৃত নৈমুদ্দিনের পুত্র নবাব আলী এবং প্রতিবেশী বাচ্চু, আতিকুর ও হালিমা জানান, ভোরবেলা আমরা ঘর সরিয়েছি। আপাতত অন্যের জমিতে আশ্রয় নিলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে হতাশ এসব পরিবারের অভিভাবকরা। এই দীর্ঘ জীবনে অনেকবার তাদেরকে এই ধরণের পরিস্থিতিতে মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন জমির দাম কম ছিল। মানুষও অসহায়দের আশ্রয় দিতে কুন্ঠা বোধ করতেন না। এখন সবকিছুর মূল্য বেড়ে গেছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে মেইন ল্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চলে এসেছে। এখানে জমির মূল্য অনেক বেশি। তাই কেউ জমি দিতে চায় না। এক বাঁধে হাজার হাজার ভিটেহীন পরিবার ঠাসাঠাসি করে বসবাস করছে। সেখানেও ঠাঁই নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ফলে ভাঙন কবলিতদের অনেকেই খোলা আকাশে ছাপড়া তুলে আশ্রয় নিয়েছে।  

এখন পর্যন্ত এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি কেউই। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর দাবি দ্রুত ডাম্পিং-এর কাজ শুরু করা। যাতে বসতভিটাসহ আবাদি জমি রক্ষা পায়। এ ব্যাপারে হাতিয়া ইউনিয়নর চেয়ারম্যন আবুল হোসেন জানান, 'প্রতি বছর অজস্র পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। আমি একা কি করতে পারি? যতটুকু পারছি চেষ্টা করছি। এছাড়াও ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। যেভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদী গর্ভে চলে যাবে। '

অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, 'ওই পয়েন্টে বেশ কয়েক মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন হচ্ছে। আমরা তীর রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ মিটার জায়গায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। এখানে নতুন করে তীররক্ষা বাঁধের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। '

নিউজ টোয়েন্টিফোর/ডিএ