পেঁয়াজের পর এবার বীজেও আগুন

পেঁয়াজের পর এবার বীজেও আগুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা কেজি দরে। এতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা।

কৃষক রফিক মিয়ার ইচ্ছে ছিলো এবার পেঁয়াজ চাষ বেশি করবেন। কিন্তু বীজ কিনতে আগ্রহ হারিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিন্দুউড়ার এই কৃষক।

পেঁয়াজের দামের আগুনের প্রভাব পড়েছে বীজেও। রফিক মিয়ার মতোই ওই এলাকার অনেক কৃষকের ইচ্ছে ছিল এবার বেশি পরিমাণ জায়গা নিয়ে পেঁয়াজ চাষের।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ বীজের দাম বেড়েছে ১২শ' টাকা।

শহরের বাজারে যে বীজ বিক্রি হচ্ছে ১৬/১৭’শ টাকা, তা গ্রামের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়।

এই এলাকার কৃষকরা সাধারণত পেঁয়াজের গোটা (কন্ধ) লাগিয়ে পেঁয়াজ ফলান। সেই গোটারও সংকট। গত বছর এক কেজি গোটার দাম ছিলো ৩০/৩৫ টাকা তা এখন ২৬০ টাকা। বীজ আর কন্ধের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৫৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পেঁয়াজ। সদর উপজেলায় ১ হেক্টর, সরাইলে ২০ হেক্টর, কসবায় ১০ হেক্টর, নবীনগরে ২৭ হেক্টর, বাঞ্ছারামপুরে ৪০ হেক্টর, নাসিরনগরে ৩০ হেক্টর, আখাউড়ার ১ হেক্টর, আশুগঞ্জে ৫ হেক্টর ও বিজয়নগরের ১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে পিয়াজের আবাদ শুরু হয়েছে এখানে। আবাদ চলবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পিয়াজ উৎপাদন হয় না। কৃষকরা নিজেরা খাওয়ার জন্যে পেঁয়াজ আবাদ করেন।  

শহরের জগতবাজারে বীজ বিক্রেতা মেসার্স বিছমিল্লাহ বীজ ভান্ডার’র ব্যবসায়ীরা জানান, দু’সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের বীজের দাম দ্বিগুনেরও বেশি হয়েছে। ৭/৮’শ টাকার বীজ হয়েছে ১৫/১৬’শ টাকা। মেটাল এগ্রো লিমিটেড’র আধা কেজি বীজ কিনেছেন ৮শত টাকায়। ৪টি প্যাকেটে ২ কেজি বীজ কিনেছেন ৩২’শ টাকায়। ওই ইনভয়েসে কোন কমিশন হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে।  

ওই বীজ ব্যবসায়ীরা জানান, ১৭ নভেম্বর ১৫’শ টাকা কেজিতে বীজ কিনেছেন। চাহিদা থাকায় তারা আমাদের কমিশন দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। লাল তীরের বীজের দাম বেশি। তাদের দুই ধরনের বীজ রয়েছে। যার কোম্পানী রেট ১৬’শ ও ১৮’শ টাকা এখন। এছাড়া মাসুদ সীড, মোমিন সীড এবং ইউনাইটেড সীডের পিয়াজ বীজ প্রতি কেজি ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আলী বীজ ভান্ডারের আলী মিয়া জানান, গত মৌসুমে আধা কেজি বীজও বিক্রি করতে পারতেন না। এখন পর্যন্ত দেড় কেজি বীজ বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে জেলা শহর থেকে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরত্বের গ্রামের হাটে শুক্রবারে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজের বীজ।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু নাছের জানান, নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে। এখানকার কৃষকরা গোটা পেঁয়াজই আবাদ করেন বেশি। বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর, নাসিরনগর এবং আশুগঞ্জে বীজ দিয়ে পেঁয়াজ আবাদ হয়। বিজয়নগর উপজেলার এক একর জমিতে গোটা পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি সহায়তাসহ বিনামূল্যে বীজ সরবারহ করেছেন তারা।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)