সম্প্রতি ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। কিন্তু তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কিংবা সিনিয়র কোনো মন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা এটাকে ‘যেচে অপমান নেওয়া’ বলে মনে করছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অবশ্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
সূত্রে জানা গেছে, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। কারণ ভারতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) করে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের দেশছাড়া করা হচ্ছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি-বিরোধী।
তিনি (মমতা) উপস্থিত থাকবেন এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আগ্রহ দেখাননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহরা। এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ মোদী। পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে আসা জঙ্গিপনায় ভারত যখন চাপে, সেই সময় হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবেন।
সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি।
সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে অসম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়। এমন ‘পরম মিত্রের’ ভারত সফরে দিল্লির এই উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রা কাড়তে না চাইলেও দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার পক্ষে চাপের, সে কথা ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির আচরণ তাকে উস্কে দিতে পারে।
চিনপন্থী গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পরে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চিনের কাছে ঋণের ফাঁসে কার্যত বন্দি কলম্বো তাদের হাম্বানটোটা বন্দরটি তুলে দিয়েছে বেজিংয়ের হাতে।
ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারত-বিরোধী ঘাঁটি তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বেজিং। এ বার গোতাবায়ার জমানায় সেই কাজ মসৃণ হওয়ার সম্ভাবনা।
ডোকলাম পরবর্তী ভুটান এবং চিনপন্থী সরকার হওয়ার পরে নেপালও খোলাখুলি ভাবেই বেজিংয়ের দিকে ঝুঁকে রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় পর্যটকদের জন্য মোটা পর্যটন শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান।
অন্যদিকে চিনের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ায় নয়াদিল্লির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে নেপালের।
ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত যৌথ সেনা মহড়া থেকে কাঠমান্ডুর সরে দাঁড়ানো, চিনের সঙ্গে পণ্য পরিবহণ চুক্তি করা, বেজিংয়ের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ নিজেদের সামিল করার মতো বিষয়গুলি থেকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দিল্লির এমন শীতল ব্যবহারে অবাক অনেকেই।
সূত্র: আনন্দবাজার
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)