আরিফ-বিজনের প্রযোজনায় আসছে ভারতীয় ছবি

আরিফ-বিজনের প্রযোজনায় আসছে ভারতীয় ছবি

অনলাইন ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ কো-প্রডাকশন মার্কেট ফিল্ম বাজারের এ বছরের আয়োজন ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। গত ২০ নভেম্বর শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী এ আসর। বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা-প্রযোজকদের জন্য এবারের আসরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।   বাংলাদেশের প্রযোজক ও নির্মাতা আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ ফিল্ম বাজারে নিজেদের প্রকল্প নিয়ে গত কয়েক বছর টানা অংশগ্রহণ করছেন।

এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে কো-প্রডাকশন মার্কেটে তাদের প্রযোজিত 'একা' নামের একটি ভারতীয় ছবির প্রকল্প জায়গা পেয়েছে। গতকাল আরিফুর রহমান জানালেন ফিল্ম বাজার ও তাদের নতুন প্রকল্প নিয়ে—  

উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক এ বছর ভারতের ফিল্ম বাজারে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এর গুরুত্ব কেমন?

আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য ভারতের ফিল্ম বাজার খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাছাকাছি বড় পরিসরে এমন কোনো মার্কেট নেই, যেখানে খুব সহজেই এখানকার চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা তাদের স্বপ্ন-ভাবনা নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

এশিয়ার মধ্যে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট এবং হাফসহ (হংক এশিয়ান ফিল্ম ফিন্যান্সিং ফোরাম) বেশ কয়েকটি মার্কেট আছে। কিন্তু আসতে-যেতে যে খরচের প্রয়োজন, তা মেটানো আমাদের মতো দেশের স্বাধীন নির্মাতাদের জন্য বেশ কঠিন। এ বিচারে ভারতে আয়োজিত ফিল্ম বাজার তুলনামূলক সহজসাধ্য। ফলে সাব-কন্টিনেন্টের নির্মাতারা তাদের ছবির প্রকল্প পিচ করার জন্য জায়গাটিকে অন্যতম প্রধান বিবেচনায় রাখেন।

ফিল্ম বাজার থেকে আপনাদের অর্জন কেমন হয়?

অনেক অনেক। আমাদের 'মাটির প্রজার দেশে' ছবিটি ফিল্ম বাজারে প্রথমবারের মতো রিকমেন্ডেশন সেকশনে ছিল। এই সুবাদে সেখানে অনেক প্রোগ্রামারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে। পরের বছরগুলোয় 'লাইভ ফ্রম ঢাকা' ও 'ট্রি অব নলেজ' ছবির প্রকল্প নিয়ে এখানে অংশ নিয়েছি। 'ট্রি অব নলেজ' ছবিটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা ফজলে রাব্বি মৃধা। এটা ওর প্রথম ছবি। ছবিটিকে আমরা কেবল ওয়ার্কিং প্রজেক্ট হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছবিটি ওখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামার দেখেছেন এবং আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আশা করা যায় এর পোস্ট-প্রডাকশনের কাজ শেষ হলে ভালো ভালো উৎসবে যাবে। এছাড়া এখানকার প্রোগ্রামার, ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ, সেলস এজেন্ট ও প্রযোজকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত পরিচয় থাকার কারণে অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর আমরা গেলাম 'একা' নিয়ে। 'একা' একটি ভারতীয় ছবির প্রজেক্ট। এর প্রযোজক আমি, বিজন ও গুপী বাঘা। পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ প্রযোজক হিসেবে থাকছেন ডমিনিক ওয়েলিনস্কি।

ভারতীয় ছবির প্রকল্প 'একা'র সঙ্গে আপনাদের সংশ্লিষ্টতা হলো কেমন করে?

'একা' নির্মাণ করছেন সুমন সেন, তিনি কলকাতার ছেলে, কিন্তু থাকেন মুম্বাই। দুই বছর আগে একদিন আমাকে নিজেই ফোন করে তার পরিচয় দেন। তিনি আমাকে বলেন, তার প্রথম ছবির স্ক্রিপ্ট ১০ বছর ধরে লিখছেন। কিন্তু ছবিটি খুবই ইনডিপেনডেন্ট একটি ছবি হওয়ার কারণে বাণিজ্যিক ছবির প্রযোজকরা এতে যুক্ত হতে অনাগ্রহ দেখায়। এরপর সুমন ফিল্ম বাজার, লোকার্নোর মতো প্লাটফর্মের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন এবং আমাদের ব্যাপারে উৎসাহিত হন।

এরপর আর কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল?

সুমন সেনের সঙ্গে আলোচনার শুরুতেই আমার জিজ্ঞাসা ছিল ভারতে অনেক ইনডিপেনডেন্ট ছবি প্রযোজক থাকা সত্ত্বেও গুপী বাঘার সঙ্গে কেন তিনি আগ্রহী হলেন। এ প্রশ্নের উত্তরে সুমন বললেন, ‘আসলে আপনারা যে স্পিরিট নিয়ে কাজ করেন, তাই আমার দরকার। আপনাদের ক্রিয়েটিভ কনসালট্যান্সি ও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি ছবির পেছনে যে ইনপুটটা দেন, সেটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। মূলত এর পরই এগোই। ’ আমরা তার স্ক্রিপ্ট দেখার পর কিছু শর্ত ও পরামর্শ দিয়েছিলাম। প্রথম শর্ত ছিল, কোনো তাড়াহুড়ো করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, তার স্ক্রিপ্ট অনেক বেশি ডেভেলপ করতে হবে। দুটো শর্তই তিনি হাসিমুখে মেনে নেন। এরপর তার সঙ্গে কোরাইটার হিসেবে যোগ দেন বিজন।

ছবিটিতে অভিনয় করবে কারা?

শুরুতে এর প্রধান চরিত্রের জন্য আমরা চাইছিলাম ইরফান খানকে। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আদিল হোসেনের কাছে যাই। তিনি স্ক্রিপ্ট দেখে এতে কাজ করতে রাজি হয়ে যান।

প্রকল্পটিকে শুরুতেই কেন ফিল্ম বাজারে নিয়ে এলেন?

আগেই বলেছি ছবিটির নির্মাতা একজন ভারতীয়, হিন্দি ভাষায় নির্মাণের কথা রয়েছে এটির। এতে আনু রাঙাচার নামে একজন ভারতীয় সহপ্রযোজকও আছেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ফিল্ম বাজারে আসার অভিজ্ঞতা রয়েছে এ ছবির ফরাসি প্রযোজক ডমিনিক ওয়েলিনস্কির। সব মিলিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম শুধু অর্থ নয়, ছবিটি এখানে পিচ করলে ওখানে যত প্রোগ্রামার, সেলস এজেন্ট, ফিল্ম কমিউনিটির লোকজন আসবে, তাদের সবার কাছে ছবিটির খবর পৌঁছে যাবে ও আলোচনা শুরু হবে। এসব ভেবেই ফিল্ম বাজারে যাওয়া আমাদের।

ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে যখন দেশের স্বাধীন নির্মাতারা অনেক সংকট মোকাবেলা করছেন, সেখানে আপনারা ভারতের ছবি প্রযোজনা করছেন। এ নিয়ে কিছু বলতে চান?

এ ব্যাপারটায় আমরা খুবই স্পষ্টবাদী। আমরা গুপী বাঘা প্রডাকশনসকে একটি গ্লোবাল প্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড় করাতে চাই, বিশেষ করে এশিয়ায় আমরা আগামী ১০ বছরের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে নিজেদের দেখতে চাইছি। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগে থেকেই আমরা অনেক বেশি আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, জাপান ও ভারত। তাছাড়া বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রির জন্য তো কাজ করছিই। 'মাটির প্রজার দেশে' আমাদের জীবনের প্রথম ছবি, ছবিটি বিজন দেশের বাইরেই করতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই সে দেশের মাটিতে ছবিটি করেছে। এমনকি কেউ এগিয়ে না এলেও নিজেদের প্রচেষ্টায় ছবিটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের দেখিয়েছি আমরা।

সূত্র: বণিক বার্তা

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/ডিএ