শ্বাসরুদ্ধকর ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’
হলি আর্টিজেন জঙ্গি হামলা

শ্বাসরুদ্ধকর ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’

অনলাইন ডেস্ক

বহুল আলোচিত স্প্যানিস রেস্তোরাঁ রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই শুক্রবার, রমজান মাসে ইফতারের পর হঠাৎ শুরু হয় জঙ্গি হামলা। রেস্তোরাঁতে জিম্মি উদ্ধারে পরিচালিত অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’।

জিম্মি দেশি-বিদেশি নাগরিকদের উদ্ধার করতে প্যারা কমান্ডো টিম রেস্তোরাঁটি কেন্দ্র করে চারদিকে অবস্থান নিতে শুরু করে। এর আগে নৌবাহিনীর কমান্ডো টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।

এরপর সেখানে আসে সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশন। সবমিলে ওই রেস্তোরাঁকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়। গুলশান এলাকার চার বর্গকিলোমিটার এলাকা সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানটির মনিটরিং চলে।

ভবনের প্রবেশমুখে ৭৯ নম্বর সড়কে অবস্থান নেয় প্যারা কমান্ডো। হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁর পূর্বপাশে গুলশান লেক। লেকের পাশে হাঁটাপথেও অবস্থান নেয় প্যারা কমান্ডো। ওই ভবনের পশ্চিম দিক অর্থাৎ প্রবেশের আগে লেকভিউ ক্লিনিক। ওই ক্লিনিকের ভবনের উপরে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর স্নাইপার টিম। স্নাইপার রাইফেল নিয়ে তারা হলি আর্টিজান বেকারি ভবনটির দিকে তাক করে থাকে।

অন্যদিকে, ৭৯ নম্বর সড়কে সেনাবাহিনীর নয়টি এপিসি ও দুটি সাঁজোয়া গাড়ি অবস্থান নেয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে সেখানে অবস্থান নেয় ১৬টি ইউনিট ও একটি জেমিনি বোটও। জেমিনি বোটটি গুলশান লেকে অবস্থান নেয়। ওই ভবনে অভিযান চালানোর সময় জঙ্গি সদস্যরা পেছন দিয়ে বের হয়ে গুলশান লেক দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় গুলশান লেক ও লেক সংলগ্ন পদচারী রাস্তায় অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশন।

অন্যদিকে, ৭৯ নম্বরে সড়কে র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-২ এর সদস্যরা অবস্থান নেন। এভাবে ওই ভবন ঘিরে প্যারা কমান্ডো ট্রুপের অভিযানের ছক কষতে কষতে ভোরের আলো ফুটে উঠে। শনিবার (০২ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে প্যারা কমান্ডো ট্রুপ ওই বাড়িকে কেন্দ্র করে রেকি করে। এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান শুরু হয়। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে ভোরের গুলশান প্রকম্পিত হতে থাকে। শত শত রাউন্ড গুলি ছুড়তে থাকে। প্যারা কমান্ডোর সদস্যরা ক্রলিং করতে করতে সামনের দিকে এগোতে থাকেন। এরমধ্যে পদাতিক ডিভিশন গুলি চালাতে থাকে। ভেতর থেকে জঙ্গিরাও গুলি চালাতে থাকে। একপর্যায়ে প্যারা কমান্ডো ট্রুপের সদস্যরা রেস্তোরাঁটির খুব কাছাকাছি চলে যান। এভাবে প্রায় ১৩ মিনিট ধরে গুলি চালানোর পর কমান্ডোরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। ধরাশায়ী হয় জঙ্গিরা।

একইসময় প্রায় ২০ থেকে ২৫টি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। পরে ওই ভবনে র‍্যাবের বোম ডিসপজাল টিম প্রবেশ করে অবিস্ফোরিত বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে। পরে সকাল ৮টায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।  

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/ডিএ