মিলনের সময় চর-থুতুর শিকার হন এক-তৃতীয়াংশ নারী!

মিলনের সময় চর-থুতুর শিকার হন এক-তৃতীয়াংশ নারী!

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের ৪০ বছরের চেয়ে কম বয়সী নারীদের এক-তৃতীয়াংশই যৌন সঙ্গমের সময় সহিংসতার (চড় মারা, শ্বাসরোধ করা, থুতু দেওয়া) শিকার হয়েছেন।

বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভের একটি গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

যেসব নারীর এই ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাদের অন্তত ২০% জানিয়েছেন পরে তারা ভীত বা বিপর্যস্ত বোধ করেছেন।

২৩ বছর বয়সী অ্যানা জানান, তিনজন আলাদা পুরুষের সাথে সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্কের সময় তিনি এধরণের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রথমবার তার চুল ধরে টানা হয় এবং চড় মারা হয়। এরপর তার সঙ্গী অ্যানা’র গলায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন।

‘আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করি এবং ভয় পাই।

কেউ যদি রাস্তায় আপনাকে চড় মারতো এবং গলা চেপে ধরতো তাহলে সেটিকে হামলা হিসেবে দেখা হতো’, বলেন অ্যানা।

নিজের বন্ধুদের সাথে যখন অ্যানা এই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন তখনই বুঝতে পারেন যে এরকম ঘটনা অহরহই ঘটছে।

‘এরপর থেকে দেখলাম অধিকাংশ পুরুষই এসব কাজের সবগুলো একসাথে না হলেও অন্তত কোনো একটি করার চেষ্টা করেন। ’

আরেকবার সঙ্গমরত অবস্থায় তার অনুমতি না নিয়ে কোনো ইঙ্গিত না দিয়েই পুরুষ সঙ্গী অ্যানার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে।

অ্যানা বলেন- তার আরেক সঙ্গী যৌনমিলনের সময় তার উপর এতটাই বল প্রয়োগ করে যে পরে তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়।

‘আমি জানি কিছু নারী বলবেন যে তারা এগুলো উপভোগ করেন। সমস্যা হয় তখনই, যখন পুরুষরা ধরে নেয় যে সব নারীই সেগুলো উপভোগ করবে। ’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাভান্টা কমরেস যুক্তরাজ্যের ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ২ হাজার ২ জন নারীকে জিজ্ঞেস করেন তারা যৌনমিলনের সময় চড়, শ্বাসরোধ, কন্ঠরোধ অথবা থুতু দেওয়া উপভোগ করেন কিনা এবং অযাচিতভাবে এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি তাদের পড়তে হয়েছে কিনা।

এক-তৃতীয়াংশের বেশি নারীই (৩৮%) এই ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান।

৩১% নারী জানিয়েছেন তারা এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু তা তাদের অনুমতি সাপেক্ষে ছিল।

আর ৩১% নারী বলেছেন তাদের এধরণের কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি, এসম্পর্কে জানেন না অথবা তারা এনিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা সেন্টার ফর ওমেন্স জাস্টিসের মতে- এধরণের ঘটনার সংখ্যা বাড়ায় বোঝা যায় যে যৌনমিলনের সময় ‘অবমাননাকর, ঝুঁকিপূর্ণ ও সহিংস কাজের অনুমতি দেয়ার জন্য নারীদের ওপর চাপ বাড়ছে। ’

তারা বলছে, ‘এক্সট্রিম পর্নোগ্রাফিকে স্বাভাবিকভাবে দেখা, এর সহজলভ্যতা ও যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেই এধরনের ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে। ’

এমা’র বয়স ত্রিশের কোঠায় এবং তিনি মাত্রই দীর্ঘ সময় টিকে থাকা একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

তারপর তিনি একরাতের জন্য এক ব্যক্তির সাথে যৌনসম্পর্ক করেন।

‘সেক্সের সময় কোনো কিছু না জানিয়েই সে আমার শ্বাসরোধ করে। আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই এবং আতঙ্কিত বোধ করি। সেসময় আমি কিছু বলিনি কারণ আমার চিন্তা হয় যে, এই ব্যক্তি আমার ওপর জোর প্রয়োগ করতে পারে। ’

এমাও মনে করেন যে পর্ন দেখেই ঐ ব্যক্তির মাথায় এরকম চিন্তা এসেছে।

‘মনে হচ্ছির সে অনলাইনে এরকম কিছু দেখেছে এবং সেটাই বাস্তব জীবনে চেষ্টা করছে। ’

গবেষণায় এও উঠে আসে যে যারা যৌনমিলনের সময় চড়, শ্বাসরোধ, কন্ঠরোধ বা থুতুর মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ৪২% সেগুলো মেনে নিতে চাপ বোধ করেছেন বা তাদের জোর করে সেগুলো মেনে নিতে রাজি করানো হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)