মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাবির পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক অজয় রায় আর নেই

মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাবির পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক অজয় রায় আর নেই

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আবার অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা গেছেন অধ্যাপক অজয় রায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছেলে ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার পর থেকেই ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই জীবনের শেষ সময়টুকু কাটিয়েছেন তিনি, বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অজয় রায়ের ছাত্র ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহীম।

১৯৩৫ সালের ১লা মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহন করেছিলেন তিনি।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার উপর পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সারাজীবন কেটে গেছে তার।

মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলছেন, 'একজন সুপরিচিত বিজ্ঞানী। এক কথায় একজন অমায়িক যুক্তিবাদী ও নিষ্ঠাবান পদার্থবিদ ছিলেন।

দু একজন অনুকরণীয় শিক্ষকের মধ্যে তিনিই একজন যিনি মূলত ল্যাবরেটরিতেই পড়ে থাকতেন। এমনকি অবসরের পরেও ল্যাবরেটরিতে যাওয়া আসা ছিল তার। '

তবে একজন প্রাতিষ্ঠানিক পদার্থবিদ হিসেবেই নিজেকে আটকে রাখেননি তিনি। একদিকে এশিয়াটিক সোসাইটির বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক আবার একই সাথে অন্যদিকে ছিলেন ইতিহাস পরিষদের সহ সভাপতি। মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলছেন লেখালেখির জগতে বেশ বড় বড় কাজ আছে তার। বাংলা একাডেমির 'বাঙালা ও বাঙালির ইতিহাস' গ্রন্থের সম্পাদক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। ইব্রাহিম আরও বলেন, 'তার সাথে অনেক বড় কাজের সুযোগ পেয়েছি। পরিভাষা কোষ রচনা করেছি আমরা একসাথে মিলে। কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো শুধু একটি শব্দ নিয়েও আমরা দীর্ঘ আলোচনা  হয়েছে। '

বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ কিংবা লেখকের বাইরেও খুব সক্রিয় ছিলেন অজয় রায়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন।

'এর বাইরে আবার তিনি শিক্ষকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনীতি সচেতন মানুষ ছিলেন। শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাতায় পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ এসেছিলো। এর অনেক বিষয়ের সাথে তিনি একমত ছিলেননা। কিন্তু এর মাধ্যমে শিক্ষকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় তার ভূমিকা ছিল সত্যিই অসাধারণ,' বলছেন মিস্টার ইব্রাহীম যিনি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন।

প্রয়াত পদার্থবিদ সুলতান আহমেদ ও অজয় রায় খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, 'এ দুজনের কাছেই আমরা পদার্থবিদ্যার অ আ ক খ শেখার সুযোগ পেয়েছি বলে কৃতজ্ঞবোধ করি। সুলতান আহমেদ আগেই চলে গেছেন। আজ অজয় রায়ও চলে গেলেন। এর মাধ্যমেই আমাদের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। '

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

নিউজ টোয়েন্টিফোর/ডিএ