শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিবচর রণক্ষেত্র
এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ

শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিবচর রণক্ষেত্র

উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও'র গাড়ি ভাঙচুর, গুলি, আটক ২২
বেলাল রিজভী, মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের বিক্ষোভ নিয়ে শিবচর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিবচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা।

সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। রাতে ঘটনাস্থল ও আশেপাশ থেকে ২২জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কাজী জিহাদুল কবির এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, প্রবেশপত্র ও সনদ বিতরণের সময় টাকা নেওয়া, নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

এর আগে শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা। ওই সময় বিষয়টি ‌‌দেখার আশ্বাস দেয় উপজেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় সোমবার বিকেলে আবার আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় বসেন শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এ সময় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিলে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে বর্তমান শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে পুলিশ
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে হট্টগোল শুরু হয়। এসময় বিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। রাতে মাদারীপুর পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর করে।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলিবর্ষণ করেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার পর ২২জনকে আটক করা হয়েছে।

শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে অবরুদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। ওই এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ৩ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সোমবার বিকেলে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারকে নিয়ে এলাকায় যাই।
সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সমোঝতা করার চেষ্টা করি। কিন্তু শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রশাসনের আশ্বাস মেনে নেয়নি। পরে রাতে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চার্জসহ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, সোমবার রাতে ঘটনার পর থেকেই আমরা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অবস্থান করছি। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কাজী জিহাদুল কবির স্যার ঘটনার তদন্তে ঘটনাস্থলে আসেন। দিনভর ঘটনাস্থলে ছিলেন। এ ঘটনায় শিবচর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়। মূলত উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা না বুঝেই এ হামলা চালায়।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)