রাজাকারের তালিকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বেগ

রাজাকারের তালিকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বেগ

চিহ্নিত রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের দাবি
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাজাকারের তালিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাঙামাটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু। তিনি বলেছেন, রাঙামাটিতে অনেক রাজাকার এখনো আছে। তাদের চিহ্নিত করে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা অদৃশ্য কারণে প্রকাশ করা হয়নি।

বর্তমানে যার নাম প্রকাশ সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদীব রায়। তিনি চিহ্নিত রাজাকার। শুধু

তিনি নয়, এ অঞ্চলে রয়েছে আরও অনেক রাজাকার। তাদেরও বিচার চাই আমরা।

তাই একজন রাজাকারের নাম প্রকাশ করে
রাঙামাটিকে কলঙ্ক মুক্ত করা যাবে না। সব চিহ্নিত রাজাকারের নাম প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মও জানুক মূলত কারা দেশের শত্রু। কারা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। তাই এখনো পর্যন্ত রাঙামাটিতে যেসব রাজাকার তালিকা ভূক্ত হয়নি, তাদের নতুন তালিকা প্রনয়ণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

রাঙামাটি মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির সাবেক রাজা ত্রিদিব রায় ছিলেন আত্মস্বীকৃত কুখ্যাত রাজাকার।

তিনি ছিলেন রাঙ্গামাটি সার্কেলের ৫০তম চাকমা রাজা ও সার্কেল চীফ। ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর তার বাবা রাজা নলিনাক্ষ রায়
মারা গেলে ত্রিদিব রায় ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ সিংহাসনে বসেন।

১৯৭১ সালে দেশ ত্যাগ করেন এবং ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানেই মারা যান। রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ
স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে চলে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪২ বছর ধরে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বসবাস করেন।
পাকিস্তানের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত রাজাকার ত্রিদিব রায় ১৯৭০ এর দশকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মন্ত্রিসভায় ত্রিদিব রায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি পাকিস্তান সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত নিযুক্ত হয়ে পাকিস্তানের পক্ষে জনমত গঠনে করেন। স্বাধীনতার পর ত্রিদিব রায় আর দেশে ফিরে আসেননি। পরে পাকিস্তান সরকার তাকে সে দেশের দপ্তরবিহীন ফেডারেল মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়। যা তাকে ‘উজিরে খামাখা’ হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ত্রিদিব রায় ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ত্রিদিব রায় বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আর্জেন্টিনা, শ্রীলঙ্কা, চিলি, ইকুযড়ের, পেরু ও উরুগুয়ের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
এম্বেসেডর এট লার্জ‌ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করার পর তিনি চূড়ান্তভাবে পাকিস্তান ফিরে আসেন। এরপর থেকে তিনি সে দেশের এম্বেসেডর এট লার্জ‌ ছিলেন।

ছয় দফা দাবির বিরোধীতা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ত্রিদিব রায় এই কর্মসূচির সমর্থক ছিলেন না। সেসময় তিনি বিভিন্নভাবে ছয় দফার বিরোধীতা করেন।

উলে­খ্য, ১৯৩৩ সালের ১৪ মে রাজা ত্রিদিব রায় চাকমা রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত সার্কেল চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৭৭ সালে তার অনুপস্থিতিতেই তার ছেলে বর্তমান সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায় রাজার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বর্তমানেও তিনি রাঙামাটি সার্কেল চীফ হিসেবে নিয়জিত আছেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)