রাজাকারদের তালিকা নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য

রাজাকারদের তালিকা নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য

অনলাইন ডেস্ক

রাজাকারদের তালিকা নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে তার পুরো দায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদাজ্জুমান খান কামাল। এদিকে রাজাকারের তালিকায় ত্রুটির কথা স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ‘ওরা (বিএনপি-জামায়াত সরকার) ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় থাকার সময় হয়তোবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাখা কাগজপত্র কারসাজি করে রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিখে রেখেছে।

‘এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। সে কারণে ভুলটা হয়ে গেছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। ’

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি কোনও রাজাকারের তালিকায় নয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে রাজাকার, আলবদর, আল শামসের তালিকা দেওয়া হয়নি; দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।

নোট দেওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সবার নাম প্রকাশ করায় এর পুরো দায় ওই মন্ত্রণালয়ের। ’

নামের তালিকা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘দালাল আইনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের নামের তালিকা আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রী তালিকা চেয়েছেন, আমরা দিয়েছি। কিন্তু তা প্রকাশ করবেন কিনা তা আমাদের বলেননি। ’

ঠিকমতো যাচাইবাছাই না করেই এই তালিকা প্রকাশ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর ‘রাজনৈতিক স্টান্টবাজি’ কিনা, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তা আমি বলব না। আমি বিশ্বাস করি তিনি হয়তো ভালো কিছু করার জন্যই এই তালিকাটি চেয়েছিলেন। ’

এই ধরনের বিতর্কিত তালিকা তৈরি করা ‘সাবোট্যাজ’ কিনা, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা খতিয়ে দেখা হবে। আমার মন্ত্রণালয় যে কাজ করেছে, তাতে ভুল হতে পারে। তবে এ ধরনের একটি বড় কাজে সেই ভুল কতখানি সহনীয় তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করা হবে। ’

এদিকে আজ বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বিজয় মেলা মাঠে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে এক সমাবেশে আ ক ম মোজাম্মেল দুঃখপ্রকাশ করে বলেন বলেন, ‘দুই-চারজন মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় তাঁরা দুঃখ পেয়েছেন। আমার নাম এই তালিকায় এলে যেমন কষ্ট পেতাম, তালিকায় তাদের নাম আসায় একই কষ্ট পাচ্ছি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকলে আমরা অচিরেই যাচাই-বাছাই করে সে নামগুলো প্রত্যাহার করে নেব। তবে রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের নাম থাকবেই। পরবর্তীতে যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। পরে আর যেন ভুল না হয়, তা আমরা যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করব। ’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘এই তালিকায় ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল না। রাজাকারদের তালিকায় যাদের নাম ছিল, তা সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল। এ কারণে যাচাই-বাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করায় আমরা এই হোঁচট খেয়েছি। কাজ করতে গেলে ভুল তো হতেই পারে। ৬৪ জেলার ৪৬০টি উপজেলার যে সম্পূরক তালিকা আসবে, পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। ত্রুটিপূর্ণ তালিকা মন্ত্রণালয়ের নিজ উদ্যোগে সংশোধন করা হবে। ’

এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমি জানি, বল্লার (মৌমাছি) চাকে আমি হাত দিয়েছি। রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের তালিকা প্রকাশ করেছি। সংগত কারণেই একটা বিশেষ শ্রেণি ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন ৪৮ বছর পর রাজাকারদের তালিকা করার কী দরকার? তাঁরা তো বলবেই। কারণ, তাদের আঁতে ঘা লাগে। ’

উল্লেখ্য, গত রোববার ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। তালিকা প্রকাশের পরই নানা বিতর্ক ছড়াচ্ছে। দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনা চলছে।

সেই তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু, গ্রেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্ত্তী, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ মজিবুল হকসহ অনেক ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম উঠে এসেছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর