যে কারণে বাদ পড়লেন সাঈদ খোকন!

যে কারণে বাদ পড়লেন সাঈদ খোকন!

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। দলের নেতারা বলছেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বেফাঁস মন্তব্যের কারণে গত সাড়ে চার বছর সাঈদ খোকনকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর তাঁর বেফাঁস মন্তব্যে রাজধানীর মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এসব কারণে এবার সাঈদ খোকনকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়নি।

গতকাল রোববার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনীত দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।  

এ সময় তিনি বলেন, ‘যাঁরা মনোনয়ন বোর্ডে ছিলেন, তাঁরা প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন। গ্রহণযোগ্যতার দিকটি বিবেচনায় নিয়েছেন। সবার সম্মতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন।

এর আগে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা বিতর্কিত তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বিতর্কের ঊর্ধ্বে যারা, যাদের অপকর্মের রেকর্ড নেই—এ ধরনের প্রার্থীদের আমরা মনোনয়ন দেব। ’

দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন ঘোষণার পর মেয়র খোকনের মনোনয়ন নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। এরপর দলীয় মেয়র পদে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের সমর্থন চূড়ান্ত করতে শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড সদস্যরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে মতামত দেন।  

বৈঠকে দলীয় মনোনয়নপত্র জমাদানকারী আগ্রহী মেয়র প্রার্থীদের ডাকা হয়। তবে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও নির্ধারিত সময়ে গণভবনে যাননি। পরে ফোন করে তাঁকে ডেকে আনা হয়। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি সাঈদ খোকন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য গতকাল বলেন, মনোনয়ন বোর্ডের সভায় একজন সদস্যও সাঈদ খোকনকে সমর্থন করেননি। সবাই তাঁর বিরোধিতা করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, সাড়ে চার বছর মেয়র থাকাকালে নগর ভবনে আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা পরিবেষ্টিত সাঈদ খোকন ডিএসসিসির সব উন্নয়নমূলক কাজ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। গুটিকয় ছাড়া দক্ষিণের অধিকাংশ কাউন্সিলরই অনেক আগেই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ওই নেতা জানান, মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থাপিত বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে বিষয়গুলো উঠে আসে।

জানা গেছে, রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে গত ২৫ জুলাই এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র খোকন। এ বিষয়টিও মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এক সদস্য তুলে ধরেন। ওই অনুষ্ঠানে সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ‘মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে সেটি কাল্পনিক তথ্য। এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক, বিভ্রান্তিমূলক। ছেলেধরা, সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা। ’ মেয়র সাঈদ খোকনের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দলের ভেতরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর আগে সড়কের পাশে ছোট ডাস্টবিন বসানোর প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন তিনি। এ নিয়েও সমালোচিত হন সাঈদ খোকন।

এ ছাড়া ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আজিমপুরের পার্ল হারবাল কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশের পাশেই মেয়র সাঈদ খোকন পাল্টা কর্মসূচি দেন। পরে ওই সমাবেশস্থলের সামনে ট্রাকে করে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ঘটনায় মেয়রকেই দোষারোপ করা হয়। ওই ঘটনায় তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র সাঈদ খোকনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন। তাঁর বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাঈদ খোকনের অবস্থান ছিল বিতর্কিত।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল