পুলিশ জনগণের বন্ধু, জনগণের করের টাকায় পুলিশের পোশাক কেনা হয়, বেতনভাতা হয়। সংবিধান বলছে, পুলিশের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব সাধারণ মানুষের জান এবং মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো কতজন পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করার সময় এই কথাগুলো তাদের মন ও মগজে ধারণ করেন? উত্তর আপেক্ষিক; হয়তো অনেকে করেন, অনেকে করেন না। যারা করেন না এমন পুলিশ সদস্যদের অন্দরমহলের খবর জানাবে 'টিম আন্ডারকাভার'।
সন্ত্রাসীদের কোন পোশাক থাকে না। থাকে না ছিনতাইকারীদেরও। পোশাক থাকে পুলিশের। যাতে মানুষ কোন বিপদে পড়লেই কাছাকাছি থাকা পুলিশের কাছে সহায়তা চাইতে পারেন।
নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী প্রোগ্রাম 'টিম আন্ডারকভার'এর ৩৩ তম পর্ব 'ঘরে বাইরে পুলিশ'। এখানে উঠে এসেছেন সেইসব পুলিশ সদস্যদের কাহিনী, যারা অভিযোগের তীরে বিদ্ধ।
রাজধানীর উত্তরখানে পরিবারসহ থাকেন মানিক মিয়া। পেশায় ব্যবসায়ী। গত ২৭ অক্টোবর ছিল তার জীবনের কালরাত। তার ভাষায়- মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।
মানিক মিয়া বলেন, ''আমি রাস্তা দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা মাইক্রো এসে থামে। আমাকে নাম ধরে ডাক দিয়ে কোমরে ধরে বলে, আমরা ডিবির লোক। কোন কথা বলবি না। গাড়িতে আমাকে উঠিয়ে নেয়। গাড়ির ভেতরে আমাকে অনেক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে আমাকে উত্তরা নিয়ে যায়। ওয়াইফকে (স্ত্রীকে) ফোন দিতে বলে। দুই লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বলে। আমার ওয়াইফ একলক্ষ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এরপর আমাকে ছাড়ে। ''
এই ঘটনার পর মানিক মিয়া ৪ নভেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে উত্তরখান থানার এসআই আশিকের উপর। তিনি তার অভিযোগপত্রে যে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন তার নাম মনিরুজ্জামান। কারণ, এই নামটি সেদিনের সাদা পোশাক পরা লোকেরা বলেছিল তাকে। পরে তার বিবরণের সঙ্গে যে গোয়েন্দা পুলিশের বিবরণ মিলে যায় তার নাম লোকমান হাকিম।
মানিক মিয়া বলেন, আমি অভিযোগ মনিরুজ্জামানের নামে করেছিলাম। তারা ওই নাম বলেছিল। কিন্তু, আসলে মনিরুজ্জামান সেখানে ছিলেন না। আমাকে লোক চিহ্নিত করার জন্য ডাকা হয়েছিল। সেখানে পাঁচজন করে হাজির করা হয়। সেখানে মনিরুজ্জামান ছিলেন। কিন্তু, উনি আসলে আমাকে সেদিন অপহরণ করেননি। আমি যে বিবরণটা দিয়েছি উনি সেদিন হাজির হননি। ছুটিতে ছিলেন। বাড়ি দক্ষিণ খান। পরে উনাকে পেয়েছিল। নাম লোকমান হাকিম। এর কিছুদিন পরে লোকমান হাকিম আরও দুইজনকে নিয়ে টাকা ফেরত দিতে আসেন।
এদিকে লোকমান হাকিম যে সেদিন টাকা ফেরত দিতে এসেছিল তা টিম আন্ডারকাভার অনুসন্ধানে উঠে আসে। পাওয়া যায় এর সাক্ষীও।
এরপর আন্ডারকাভার টিম লোকমান হাকিমের বাসা খুঁজে বের করতে পথে নামে। খুঁজতে খুঁজতে পাওয়া যায় বিশাল বহুতল বাড়িটি। কিন্তু বাড়িতে না থাকায় সেদিন তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরের দিন এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি জানতে যাওয়া হয় উত্তর খান থানায়। প্রতিবেদকের সামনেই ওসি হেলাল উদ্দিন তদন্ত অফিসার আশিককে ফোন করে জানান তার দায়িত্বে গাফিলতির কথা। ওসি সেদিন ফোনে আশিককে বলেন, ''আপনি তো ভালভাবে অনুসন্ধান করেননি। এটা অনেক দূর আগাইছে। এই তথ্য তো আমি আরও ১৫/২০ দিন আগে পাইছি। মনিরের সাথে আমার যোগাযোগ হইছে। মনিরের নামে নিউজ করতে দেখে মনিরের কথা তারা লিখছে। কিন্তু লোক আবিস্কার হইছে। ওই টিমে ছিল লোকমান হাকিম আর দারোগা মিশু। ''
দুই মাস তদন্তেও পুলিশ যে ঘটনার কূলকিনারা করতে পারেনি তা টি আন্ডারকাভারের অনুসন্ধানে উঠে আসে মাত্র সাতদিনে। আর এখানেই প্রশ্ন- তদন্তে কতটুকু আন্তরিক পুলিশ?
এরপরই টিম আন্ডারকাভার নজর দেয় ডিআইজি মিজানুর রহমানের সেই অস্ত্রের মুখে মরিয়ম আক্তার ইকোকে তুলে এনে বিয়ে করার ঘটনায়। উঠে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিস্তারিত দেখুন টিম আন্ডারকাভারের ভিডিও প্রতিবেদনে-