ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজে জেনারেল কাশেম সোলাইমানির মরদেহ পৌঁছেছে।
এসময় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। উপস্থিতরা বুক চাপড়ে মাতম করেন। ‘আমেরিকা নিপাত যাক’ স্লোগান দেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, জেনারেল কাশেম সোলাইমানির মরদেহ আহভাজ শহরে আনা হবে- এই খবরে সেখানে আগেই হাজারো মানুষ জড়ো হন। তাঁদের হতে ছিল ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানির ছবি। এ সময় তাঁরা বুক চাপড়ে মাতম করেন।
কাশেম সোলাইমানি ছাড়াও মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত রেভল্যুশনারি গার্ডের অন্য পাঁচ সদস্যদের মরদেহ আজ আহভাজ বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বার্তা সংস্থা ইসনা জানায়, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ সন্ধ্যায় কাশেম সোলাইমানিসহ অন্যদের মরদেহ রাজধানী তেহরানে নেওয়ার কথা। আগামীকাল সোমবার তেহরান ইউনিভার্সিটিতে কাশেম সোলাইমানির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জানাজায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ইমামতি করার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার জন্মস্থান কেরমান শহরে কাশেম সোলাইমানিকে দাফন করা হবে। দাফনের আগে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্য তাঁর মরদেহ পবিত্র কোম শহরে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইরানের ক্ষমতাধর রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি।
গত শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলায় ইরানের ক্ষমতাধর রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
একই সঙ্গে নিহত হন ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপের নেতাসহ আরও নয়জন।
কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ৫২টি স্থাপনায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে ইরানি জেনারেল সোলাইমানিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার নিন্দা এবং মধ্যপ্রাচ্যে দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার জন্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, লসএঞ্জেলেস, বস্টন সহ বিভিন্ন সিটিতে ৭১টি বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।
‘যুদ্ধ নয়-শান্তি’, ‘যুদ্ধ নয়-উন্নয়ন’, ‘যুদ্ধ নয়-বন্ধুত্ব’, ‘নো জাস্টিস নো পীচ-ইউএস আউট অব মিডল ইস্ট’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে।
ইরানি জেনারেলকে হত্যার সংবাদে ক্ষুব্ধ আমেরিকানরা হোয়াইট হাউজের সামনে, ইউএস সিনেটে সংখ্যালঘিষ্ট ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা সিনেটর চাক শ্যুমারের বাসার সামনে, টাইমস স্কোয়ার, ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে এবং জ্যাকসন
হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।
জাতীয়ভিত্তিক যুদ্ধ-বিরোধী কোয়ালিশন ‘এ্যাক্ট নাউ টু স্টপ ওয়ার এ্যান্ড য়েন্ড র্যাসিজম’র সমন্বয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই এসব কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক আমেরিকান অংশ নেন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মধ্যে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য সিনেটের মেম্বার জ্যাসিকা র্যামোজ বলেন, আমেরিকার ইতিহাস- ঐতিহ্যের পরিপন্থী আচরণে আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে করা হচ্ছে।
এহেন অবস্থার অবসানে রাজপথ এবং ক্যাপিটল হিলে একযোগে সোচ্চার থাকতে হবে। সামনের নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যালট যুদ্ধে অ-আমেরিকান ট্রাম্পকে হঠাতে হবে।
নিউইয়র্কের বিক্ষোভ আয়োজনকারীদের অধিকাংশই ছিলেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে অবতীর্ণ বার্নি স্যান্ডার্স।
সিনেটর চাক শ্যুমারের বাসার সামনের সমাবেশে বক্তৃতাকালে ব্যান ইনগ্রাহাম বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে বহু আমেরিকানকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এখনও সেই খেসারত অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ইরানের সাথে যুদ্ধ লাগিয়ে আমেরিকাকে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রিপাবলিকানদের বরদাশত করা উচিত হবে না।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)