সৌদি থেকে ৫ দিনে ফিরলেন ৪৫৪ জন

সৌদি থেকে ৫ দিনে ফিরলেন ৪৫৪ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন বছরের শুরুতেও সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশিদের ফেরা অব্যাহত আছে। গতকাল রোববার রাতে দেশটি থেকে ফিরেছেন আরও ১৩৭ বাংলাদেশি। রাত ১১ টা ২০ মিনিটে ও রাত দেড়টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ ও এসভি ৮০২ বিমানযোগে তারা দেশে ফেরেন। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে ৪৫৪ জন বাংলাদেশি ফিরলেন।

 

ফেরত আসাদের মাঝে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে ফেরা মানুষদের কাউন্সিলিং ও আর্থিকভাবে পুনরেকত্রীকরণে কর্মসূচি নিয়েছে ব্র্যাক।  

গতকাল ফেরা আকমিনা আক্তারের (৩০) বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার নরুত্তমপুর গ্রামে।

তিনি জানান, সাত মাস আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন।

কিন্তু সেখানে নিয়োগকর্তার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শুন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হন।

আকলিমা বলেন, সৌদি যাওয়ার পর থেকে আমাকে ১৮/২০ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কাজ শেষে ঘুমাতে গেলে মালিক বিরক্ত করতো, কাজ করলেও বেতন দিত না। বেতন চাইলে বলত, ‌‌‌‌‘আমাকে নাকি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে’।  

আরেক নারী গৃহকর্মী হাসিনা (২৭), বাড়ি হবিগঞ্জে। আট মাস আগে গিয়েছিলেন সৌদি। তারও গল্প একই। কিন্তু হাসিনার উপর নির্যাতনের মাত্রা এতই বেশি যে বিমানবন্দরে দাঁড়াতেই পারছিলেন না তিনি।

হাসিনা বলেন, ‘মালিক ভালা (ভালো) না খালি মারে আর খারাপ খারাপ কথা বলে। কথা না শুনলে মারে।

ফেরত আসা টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার সাদ্দাম হোসেন জানান, মাত্র এক বছর আগে এসি টেকনিশিয়ানের কাজ নিয়ে চার লাখ দশ হাজার টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে চার মাস কাজ করলেও সঠিক বেতন পাননি সাদ্দাম। তারপরেও হাল ছাড়েননি।

কিন্তু কাজ থেকে রুমে ফেরার পথে পুলিশ ধরে। আকামা থাকা সত্বেও দেশে ফেরত পাঠানো হয় সাদ্দামকে।

সুমানগঞ্জের আবুল কালাম জানান, দুই বছর আগে প্রিন্টিং এর কাজ নিয়ে ৫ লাখ চাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু ভাগ্যের চাকা না ঘুরতেই দেশে ফিরে আসতে হলো তাকে।

একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফিরেছেন- চট্টগ্রামের সগির হোসেন, সিরাজুল কবির, সিলেটের ফুরকান, মো. শাহ আলম, রফিক, নোয়াখালীর শামসুদ্দিন।

দেশে ফেরা অনেক যুবকের অভিযোগ, আকামা তৈরির জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা দিলেও আকামা দেয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও গ্রেপ্তার কর্মীর দায়দায়িত্ব নেয় না। বরং কফিল প্রশাসনকে বলেন, ক্রুশ (ভিসা বাতিল) দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিতে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গতবছর ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে ২৪ হাজার ২৮১ জন বাংলাদেশিকে  ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর পাঁচ দিনে ফিরলেন ৪৫৪ জন। এইভাবে ব্যর্থ হয়ে যারা ফিরছেন তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে প্রতারিত না হতে হয়, যে কাজে গিয়েছে সেই কাজই যেন পায় এবং খরচের টাকা তুলে ভাগ্য ফেরাতে পারে সেটা নিশ্চিত তরতে হবে রাষ্ট্র ও দূতাবাসকে।

‘এক্ষেত্রে রিক্রটিং এজেন্সিকেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। আর সরকারের নেওয়া সাম্প্রতিক ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে নারী কর্মীদের নিপীড়ন কমে আসবে বলে আমরা মনে করি। ’

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)