বিদ্যুতের তারে ঝলসে যাচ্ছে বানর!
দেখার কেউ নেই

বিদ্যুতের তারে ঝলসে যাচ্ছে বানর!

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সন্তোষপুর গ্রাম। গ্রামটি জুড়ে রয়েছে মধুপুরের শালবনের বিশাল অংশ। স্থানীয়দের মতে পাঁচ দশক আগেও বনে ছিল বাঘ হরিণ, বন্য শূকর, হনুমান। পঞ্চাশ বছরে বাঘ, হরিণ, শূকর সব হারিয়ে গেছে।

এখন হাতে

গোনা কিছু হনুমান থকালেও বানরের সংখ্যা তিন শতাধিক। তাদের দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমায় শতাধিক পর্যটক। কিন্তু গেল সপ্তাহ দুয়েক ধরে বানরগুলো দেখে পর্যটকদের মনও বেজায় খারাপ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন, দশটির বেশি বানরের দেখা মিলেছে ঝলসানো।

কারো হাত-পা, বুক-পিঠ এবং মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেছে বিদ্যুতের তারে।

ফলে কোনোমতে শালবনে টিকে থাকা বানরগুলোও এখন অস্তিত্ব সংকটে। পোড়া ক্ষতের কারণে দলবদ্ধ বানরগুলোর বাঁদরামিও নেই। সঙ্গীদের এমন অবস্থায় সতীর্থরাও বিষন্ন।

জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আশপাশে ও বিট অফিসে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন। ওই সময় তিনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বন এলাকার ভেতরে সিলভারের তারের পরিবর্তে
কভারিং কেবল দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানার নির্দেশ দেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ কথা নেয়নি কানে। পল্লী বিদ্যুতের এমন উদাসীনতায় এখন খেসারত দিচ্ছে সামাজিক বানরগুলো।

অভিযোগ উঠেছে, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিসকে বিষয়টি জানালেও এ ব্যাপারে শুরুতেই তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এমনকি বিদ্যুতের লাইন ডিজাইন করার সময় বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি।

তবে বানরগুলোর ঝলসানোর খবর পেয়ে গত বুধবার ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিস থেকে সন্তোষপুর বনাঞ্চলে বিদ্যুতের লাইনে লোক দেখানো কাজ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিট অফিস থেকে বিদ্যুতের নয়টি খুঁটি পর্যন্ত সিলভারের দুই তারের মাঝখানে তিন ফুট করে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েই লাইনের নিরাপত্তার কাজ শেষ করা হয়েছে। আর এইচটি লাইনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া আর কিছু করা হয়নি। বনের ভেতরে বিদ্যুতের কভারিং তার না দেওয়ায় বন্য প্রাণীগুলো ঝুঁকির মধ্যেই রয়ে গেছে বলে মনে করছে বন বিভাগ ও স্থানীয়রা।

news24bd.tv

ফুলবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) অনিতা বর্ধন বলেন, ‘এইচটি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বানররা যাতে আহত না হয়, সেভাবেই বিদ্যুতের লাইনের কাজ চলছে। ’

আর সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান খান বলেন, ‘কভারিং তার ব্যবহার না করে শুধু সিলভারের দুই তারের মাঝখানে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে প্রাণীদের ঝুঁকি রয়েই গেল। ’

মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ও নাওগাঁও ইউনিয়নে দুই হাজার ৮৬৩ দশমিক ১৪ একর এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। সময়ের সাথে সাথে গাছ কেটে বন উজাড় করায় দিন দিন বন্য প্রাণীগুলো বিলুপ্তির পথে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর