যে কারণে কাজ করেনি মার্কিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা

বুধবার ভোররাতে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ সেনা নিহত হয়।

যে কারণে কাজ করেনি মার্কিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা

অনলাইন ডেস্ক

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি স্থাপনায় সন্ত্রাসী হামলার পর পরাশক্তি দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিশ্বব্যাপী। সেই প্রশ্ন ফের সামনে উপস্থিত। আজ বুধবার ভোররাতে ইরাকের আল আনবার ও আরবিল প্রদেশে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। এর মধ্যে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ‘আইন আল-আসাদ' সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।

  হামলায় ঘাঁটিটি মুহূর্তে  জ্বলন্ত মৃত্যুকুপে পরিণত হয়। এতে ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত ও অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছে। অসংখ্য মার্কিন হেলিকপ্টার ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। কিন্তু, বিশ্বের সবচেয়ে 'সেরা' প্রতিরক্ষা বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকার পরও কেন ইরানের এই ক্ষেপনাস্ত্র হামলা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিহত করতে পারলো না- এমন প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।
কেন মার্কিন রাডারে ধরা পড়লো না ছুটে আসা মিসাইলের খবর?

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হামলার আগে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইরান ঘাঁটি দুটির রাডার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। এবং তাদের রাডার যে কাজ করছে না তা বুঝতেই পারেনি মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে রেডিও তেহরানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সিরাজুল ইসলামও একমত প্রকাশ করেন। আজ ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আইন আল আসাদ ইরাকের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। এটি কৌশলগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। কারণ ইরান ও সিরিয়ার মাঝখানে ইরাকের অবস্থান। সেখানে সেই ঘাঁটি। ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘাঁটি সফর করেছিলেন। এই ঘাঁটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেখানে প্রচুর পরিমান হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ছিল। যে ড্রোন দিয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে, হয়ত সেই ড্রোনটাও ওখানে ছিল। ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে আইন আল আসাদ ঘাঁটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্টে তাদের ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত হেনেছে। প্রচুর হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। ৮০ জন নিহত ও ২০০ সৈন্য আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে সেরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করলো না কেন। আমি যতটা জানতে পেরেছি, তাতে ইরান এই দুটি ঘাঁটিতে হামলার আগে ইলেক্ট্রনিক ওয়্যারফেয়ারের মাধ্যমে আমেরিকার ঘাঁটির রাডার ব্যবস্থা জ্যাম করে দিয়েছিল। যে কারণে তাদের রাডার কাজ করেনি। ইরানি ক্ষেপনাস্ত্র যে আসছে সেটা শনাক্তই করতে পারেনি তাদের রাডার। যে কারণে মার্কিন ঘাঁটি একেবারেই অরক্ষিত থেকে গেছে এবং ইরান তার সুবিধামতো হামলা চালাতে পেরেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। আইন আল আসাদ ঘাঁটি থেকেই ড্রোন উড়িয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। তাই ঘাঁটিটি ধ্বংস করে দেওয়া হলো।

সিরাজুল ইসলামের মতে যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলা চালালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে। তিনি বলেন, সংঘর্ষে জড়ানোর আগে আমেরিকার বোঝা উচিত সে কার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে যাচ্ছে। আমেরিকা কখনো এসব বিষয়কে পাত্তা দেয়নি। তারা গর্ববোধ করে যে, তার হাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী, সর্বাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। পরমাণু অস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র রয়েছে। গতকালও ট্রাম্প বলেছেন, আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে সর্বাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। সুতরাং, ইরানের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। এমন একটা প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই ইরান আজ হামলা করেছে। আমেরিকা পাল্টা জবাব দেবে এবং কী কী জবাব দিতে পারে এই বিষয়ও ইরানের মাথায় আছে। যদি পাল্টা হামলা হয় তার জন্য ইরানের অভ্যন্তরে ভূগর্ভস্থ ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা আছে। এর জন্য আলাদা টাউন আছে। সেই সব টাউনকে ইরান সতর্ক অবস্থায় রেখেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আইআরজিসি হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকা যদি পাল্টা হামলা চালায় বা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি, ইসলামি জিহাদ আন্দোলন থেকে শুরু করে ইরানকে সমর্থনকারী মধ্যপ্রাচ্যের যত সক্রীয় সংগঠন আছে তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে তাতে সন্দেহ নেই। তারা সেটা আন্তরিকভাবেই করবে। কারণ, গাঁজা থেকে যেখানে হামাস নেতারা বেরই হতে পারেন না, সেখানে জেনারেল সোলাইমানির জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া গাঁজা থেকে বের হয়ে ইরানে যান। এটা অনেক বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সম্পর্কিত খবর