নষ্ট হচ্ছে পিঁয়াজ, বাংলাদেশকে কেনার অনুরোধ ভারতের

বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি করতে চাইছে ভারত

নষ্ট হচ্ছে পিঁয়াজ, বাংলাদেশকে কেনার অনুরোধ ভারতের

অনলাইন ডেস্ক

বিপুল পরিমাণ আমদানিকৃত পিঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ভারত। আমদানিকৃত পিয়াজের উচ্চমূল্য এবং স্বাদের ভিন্নতার অজুহাত দেখিয়ে রাজ্য সরকারগুলো পিঁয়াজ কিনতে রাজি না হওয়ায় এসব পিঁয়াজ নষ্ট হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকার পর ফের বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।

গত সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার রকিবুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে আমদানিকৃত পিঁয়াজ বাংলাদেশকে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন।

বৈঠকে রকিবুল হক বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীন থেকে পিঁয়াজ আমদানি করেছে এবং নেপাল হয়ে আরও পিয়াজ দেশের বাজারে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। সুতরাং, বিনামূল্যে পরিবহনসহ ভারতের কিছু প্রণোদনা দেওয়া উচিত।

কয়েক মাস আগে হঠাৎ করে ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশ ভয়াবহ পিঁয়াজ সংকটে পড়ে। মাসের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬০ টাকা পার হয়ে যায়।

হোটেল-রেস্তোরাঁয়া খাবারের দাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিপুল সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক পরিপক্ক হবার আগেই জমি থেকে পিঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করে। এতে ভবিষ্যতে দেশি পিঁয়াজের ভয়াবহ সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে অধিক ভাড়ায় বিমানে করে পিঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা নেয় সরকার। চীন, মিশর, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমদানিকৃত পিঁয়াজ পৌঁছালে দাম কমতে শুরু করে। এখন বাজারে নতুন দেশি পিঁয়াজ উঠতে শুরু করায় শীঘ্রই পিঁয়াজের দাম ফের ৫০ টাকার নিচে নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, এ বছর ভারতে পিঁয়াজের ফলন ভাল হয়নি। মহারাষ্ট্রে অকাল বৃষ্টি এবং খরার কারণে প্রচুর পিঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে নভেম্বর মাস থেকে পিঁয়াজের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক সময় তা ১০০ রুপি পেরিয়ে যায়। পরিস্থিতি বুঝে ভারত সরকার বাংলাদেশে রাতারাতি পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলি থেকে পিঁয়াজ আমদানি শুরু করে। বিভিন্ন প্রদেশের সরকারের চাহিদার ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ পিঁয়াজ আমদানি করে ভারত। কিন্তু পিঁয়াজ আমদানির পর বেশিরভাগ রাজ্য সরকার তাদের চাহিদা প্রত্যাহার করে নেয়। ভারতের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশ থেকে মোট ৩৬ হাজার টন পিঁয়াজ আমদানির চুক্তি করেছে ভারত। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে ১৮ হাজার টন পিঁয়াজ পৌঁছেছে। বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আমদানিকৃত পিঁয়াজের মাত্র ৩ হাজার টন নিয়েছে। অবশিষ্ট পিঁয়াজ মুম্বাইয়ের জওহরলাল নেহরু বন্দরে খালাসের অপেক্ষায়।

দেশের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, আসাম, হরিয়ানা এবং কর্নাটক কেন্দ্রের কাছে সব মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ চেয়েছিল। কিন্তু পরে তা নেয়নি। সরকার এই পিঁয়াজ রাজ্য গুলির কাছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। রাজ্য সরকারগুলি বাজারে তা বিক্রি করছিল ৭০ টাকায়। কিন্তু রাজ্যগুলি পিছিয়ে আসায় এখন এই বিপুল পরিমাণ পিঁয়াজ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ পড়ে আছে মুম্বাই বন্দরে। খুব দ্রুত তা চালান করতে না পারলে সরকারের বড়সড় ক্ষতি হবে। সে জন্যই বাংলাদেশকে প্রতি মেট্রিক টন পিঁয়াজ ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলারে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

 সূত্র: দ্য প্রিন্ট ও ডয়চে ভেলে