একবিংশ শতাব্দীতে ছেলেদের থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই মেয়েরা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারী আজ পুরুষের সহযোদ্ধা হয়ে সর্বত্র কাজ করছে। তারা পাল্লা দিয়ে এরোপ্লেন, ট্রেন, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল চালাচ্ছে, এমনকি বাসও। তবে ডালমিল মেরামত এমন একটা পেশা যেখানে এতদিন পুরুষরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল।
কিন্তু এবার হয়তো কমতে চলেছে পুরুষদের সেই একচ্ছত্র প্রাধান্যও। তেমনি আরেক বিরল ঘটনার দেখা মিলল, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে।রজুফা বেগম (৫৫) হলেন বাংলাদেশের প্রথম ডাল মিলের নারী হেডমিস্ত্রী। ২৫ বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন ডাউল মিলে মেরামতের কাজ করে চলেছেন।
ডালমিল মেরামতে হেডমিস্ত্রীকে সহযোগিতা করতে করতেই নিজেই একদিন পাকা মিস্ত্রী হয়ে ওঠেন রজুফা বেগম। এখন ডালমিলের সব মেরামতের কাজই করতে পারেন তিনি। এ কাজ করেই তিনি ছেলে-মেয়ে বড় করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন। পাঁচকাঠা জায়গা কিনে ছাদ ঢালাই পাকা বাড়ি করেছেন। বর্তমানে চারটি ডালমিলের মেরামতের সব দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাশাপাশি ডালমিল মালিকের মিল সংলগ্ন গরুর খামার তিনি দেখাশোনা করেন।
সুফিয়া ডাল মিলের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম তাপস জানান, অনেক পুরুষ মিস্ত্রির চেয়েও ভালো কাজ করেন তিনি। শুধু ডাল মিল চালনাই নয়, পাশাপাশি ডাল মিলের ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ক্রটি রক্ষণাবেক্ষণ সহ ছোটখাটো মেরামতের কাজও করেন রজুফা।
হেডমিস্ত্রী রজুফা বেগম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও আমি অভ্যাস্ত। ডাল মিলের সকল কাজ করি। আমার কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রায় ৩০ জন নারী দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। এ কাজ করে প্রতিমাসে ১৬ হাজার টাকা আয় করি। এখানে মেয়েদের অংশগ্রহণ আস্তে আস্তে বাড়ছে বলে মনে করছেন রজুফা। পরে আরো মেয়েরা আসবে বলে তিনি আশাবাদী। এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় আনন্দের সঙ্গেই কাজ করেন রজুফা বেগম। ডাল মিলের মিস্ত্রীর কাজে নারী সহজে কেউ মেনে নিতে পারে না। একজন ছেলেই তো এ কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। একজন নারী কীভাবে করবে? এমন প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। কিন্তু আমি কাজ করে প্রমাণ দিই।
বানেশ্বরের ডাল ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওবায়দুর রহমান জানান, আমাদের পুঠিয়া উপজেলায় মোট ২৫০টি ডাল মিল আছে। এসব মিলের মধ্যে একমাত্র নারী হেডমিস্ত্রী রজুফা বেগম। আমার জানা মতে বাংলাদেশের ডাল মিলগুলোর মধ্যে একমাত্র নারী হেডমিস্ত্রী রজুফা বেগম। তিনি পুরুষের তুলনায় মিল মেরামতের কাজ অনেক ভালো করতে পারেন।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)