সৌদি থেকে একদিনে ফিরলেন ২২৪ বাংলাদেশি

অনেককেই ফেরত পাঠানো হয়েছে এক কাপড়ে

সৌদি থেকে একদিনে ফিরলেন ২২৪ বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সৌদি আরব থেকে একদিনেই ফেরত পাঠানো হয়েছে ২২৪ জন বাংলাদেশিকে। অনেককে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে আটক করে এক কাপড়ে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই কাপড়ে রয়ে গেছে চুন ও রঙের দাগ। চোখে-মুখে ক্ষুধা ও ক্লান্তির ছাপ।

দেশে ফিরে স্বজনের দেখা পাবার আশায় যে মানুষগুলোর চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠার কথা, তাদের চোখে-মুখে বিষাদ আর অনিশ্চয়তার ছাপ। অধিকাংশই ফিরেছেন শূন্য হাতে। অনেককে আকামা থাকার পরও দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ফিরে আসাদের মধ্যে শনিবার রাত ১১ টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে দেশে ফেরেন ১০৮ জন।

এর আগে দুপুর ১২ টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৮ বিমানযোগে জেদ্দা থেকে ফেরেন আরও ১১৬ জন। এ নিয়ে নতুন বছরের ১৮ দিনে এক হাজার ৮৩৪ জন বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ফিরলেন।   যারা ফিরলেন তাদের অনেকেই ভাগ্য ফেরাতে ধার-দেনা করে বা শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু, যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই ফিরতে হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ফেরত আসাদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুন: সৌদি থেকে শূন্য হাতে ফিরলেন আরও ১০৯ হতভাগা

গতকাল ফেরা বরিশাল জেলার আগৈলঝরা উপজেলার শামিম (৩০) জানান, মাত্র তিন মাস আগে তিন লাখ টাকা খরচ করে তিনি সৌদি আরব গিয়েছিলেন ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে। সেখানে দুই মাস কাজ করলেও কোনো বেতন পাননি। পরে মালিককে (কফিল) বারবার অনুরোধ করলে তিনি অন্য জায়গায় কাজের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সেখানে কর্মরত অবস্থায় পুলিশ তাকে আটক করেন। এ সময় তিনি মালিককে ফোন দিলেও তিনি দায়িত্ব নেননি।  

নরসিংন্দীর মো. মিন্টু মিয়া চার  লাখ টাকা খরচ করে পাঁচ মাস আগে ক্লিনারের কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কাজ শেষে রুমে ফেরার সময় পুলিশ তাকে ধরে। আকামা দেখানোর পরেও তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: সৌদিতে কক্ষে আটকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গণধর্ষণ

পটুয়াখালীর শাহিন সরদার, ময়মনসিংহের মো. আশরাফুল, মো. সুমন ও শফিক, নরসিংন্দীর সালাউদ্দিন, মানিকগঞ্জের আমিনুল, মুন্সিগঞ্জের মামুন কবিরসহ আরও অনেকেই ফিরেছেন যাদের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ফিরতে হলো।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, দেশে ফেরত আসা কর্মীরা বরাবরের মতো  অভিযোগ করেছেন, তাদের প্রত্যেককে নানা স্বপ্ন দেখিয়েছিল দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সি। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন তারা। অনেকে বেতন পাননি। অনেকে সৌদি আরবে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ফেরত এসেছেন। তারা সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়।

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় অভিবাসন বিভাগের অভিযানে ২০০ বাংলাদেশি আটক

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর ১৮ দিনে এক হাজার ৮৩৪ জন বাংলাদেশি ফিরলেন দেশটি থেকে। ফেরত আসাদের বর্ণনা প্রায় একইরকম। প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। কয়েকমাস আগে গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন।

আরও পড়ুন: সৌদি আরব থেকে ফিরলেন আরও ১৩২ বাংলা‌দে‌শি

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ছয় হাজার ১১৭ জন, ওমান থেকে সাত হাজার ৩৬৬ জন, মালদ্বীপ থেকে দুই হাজার ৫২৫ জন, কাতার থেকে দুই হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে এক হাজার ৪৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন শূন্য হাতে ফিরেছেন।  

শরিফুল হাসান বলেন, কেউ যখন বিদেশে যান তখন পরিবার স্বজন সবাই খুশি হন। কিন্তু ফেরত আসা মানুষগুলোর পাশে সেভাবে থাকেন না। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও তাদের নানা কটু কথা বলেন। অথচ এই সময় তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।