প্রাণঘাতি নতুন যত ভাইরাসের আবির্ভাব

নিপাহ ভাইরাস

প্রাণঘাতি নতুন যত ভাইরাসের আবির্ভাব

অনলাইন ডেস্ক

চীনে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস নামে নতুন একটি ভাইরাস। নতুন এই ভাইরাসটি চীনের উহান প্রদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। ওই এলাকায় এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন; মারা গেছেন তিনজন। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশও সতর্ক রয়েছে। ‘করোনা ভাইরাস' এর বিস্তার রোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানিং শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দিয়েছে আইইডিসিআর। অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
শুধু সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস নয়, গত দুই দশকে এমন অনেক নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে। এসব ভাইরাসের আক্রমনে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্যা মানুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি জনসংখ্যার দেশগুলো থেকেই নতুন ভাইরাসের উদ্ভব ঘটেছে। পরবর্তীতে কোনো ওষুধ কোম্পানি প্রতিষেধক তৈরি করলে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই নতুন নতুন ভাইরাসের আবির্ভাবের পেছনে আছে কি কোনো ব্যবসায়িক যোগসাজোস, নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। আসুন পেছন ফিরে দেখে নিই সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলা এমন কিছু ভাইরাসের আবির্ভাব।

করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস নামে নতুন এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সরকারি হিসাব মতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত দুই শতাধিক, মারা গেছেন তিন জন। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চীন সরকারের হিসাবের চাইতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি, প্রায় ১৭শ জন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট এবং মারাত্মক নিউমোনিয়া দেখা দেয়য়। এমন এক সময়ে করোনা ভাইসারের প্রাদুর্ভাব হয়েছে যখন চীনে নববর্ষ উদযাপন চলছে। এ সময় সারা বিশ্ব থেকে চীনা নাগরিকরা দেশে ফেরেন এবং অনেক পর্যটক নববর্ষ উদযাপন দেখতে চীনে ভ্রমণ করেন। ফলে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।   

বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন।

নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান।   বাংলাদেশে সাধারণত বাদুড় থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। এ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফেলাইটিস এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে। ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়। তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি।

সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের মৃত্যুর হিসাব প্রকাশ্যে আসেনি। ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস। ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান। উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়। হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়।