নাম পরিবর্তন হচ্ছে করোনা ভাইরাসের

নাম পরিবর্তন হচ্ছে করোনা ভাইরাসের

অনলাইন ডেস্ক

চীনে মহামারি রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাসকে থামানোই যাচ্ছে না। এ ভাইরাসে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। ফলে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। মঙ্গলবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন।

অর্থাৎ সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৪ হাজার ৩২৪ জন। এদিকে হাজারো মানুষ আক্রান্ত এ ভাইরাস। বন্ধ হয়েছে সীমান্ত আর। এ কারণেই চীনের একাংশ হয়ে পড়েছে অচল।

কিন্তু যে ভাইরাসটির কারণে এ ধরণের মহামারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটির এখনো কোনো যথাযথ নাম নেই।

একে করোনা ভাইরাস বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু এটা আসলে ওই ভাইরাসটির নাম নয়। বরং ভাইরাসের যে গ্রুপ বা দলে এটির অবস্থান সেটির নাম করোনা ভাইরাস।

এটির সাময়িক একটা নামও দেওয়া হয়েছিল ২০১৯-এনকভ হিসেবে। কিন্তু বলার ক্ষেত্রে এটা খুব একটা সহজ নয়।

একদল বিজ্ঞানী এই ভাইরাসটির একটি উপযুক্ত নাম ঠিক করার কসরত করে যাচ্ছিলেন।

যে তারা খুব শিগগিরই নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তারা।

এতো সময় লাগলো কেন?
নতুন কোনো ভাইরাসের নামকরণ সাধারণত কিছুটা দেরিতে হয় এবং জন স্বাস্থ্যের উপর এটি কী ধরণের প্রভাব ফেলে তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা যুক্তিসম্মত, বলেন ক্রিস্টাল ওয়াটসন যিনি জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সহকারী অধ্যাপক এবং জ্যেষ্ঠ স্কলার।

কিন্তু নামকরণকেও অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ রয়েছে।

নতুন এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে বিজ্ঞানীরা একে নোভেল বা নতুন করোনা ভাইরাস নামে ডাকছেন। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে মুকুটের মতো স্পাইক বা কাটা থাকে বলে এদের করোনা ভাইরাস নামকরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) একে প্রাথমিকভাবে ২০১৯-এনকভ নামে ডাকার সুপারিশ করেছে- যার মধ্যে এটি কোন সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল অর্থাৎ ২০১৯ এবং এন দিয়ে নোভেল বা নিউ বা নতুন বোঝায় এবং কভ দিয়ে করোনা ভাইরাস বোঝায়। তবে এটাই চূড়ান্ত নয়।

বর্তমানে এটির যে নাম আছে তা ব্যবহার সহজ নয় এবং জনগণ এবং মিডিয়া এর অন্য নাম ব্যবহার করছে, বলেন ডা. ওয়াটসন।

আনুষ্ঠানিক নাম না থাকার সমস্যা হচ্ছে মানুষ এটাকে চায়না ভাইরাস বলে ডাকতে শুরু করে, আর এটা নির্দিষ্ট জনগণের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনানুষ্ঠানিক নাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে তা আর পরিবর্তন করাটা কঠিন হয়ে পড়ে, তিনি বলেন।

জরুরি ভিত্তিতে ভাইরাসটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করার দায়িত্ব ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অব ভাইরাসেস-আইসিটিভি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের।

এর আগের প্রাদুর্ভাবটি এই দলটির জন্য সতর্কতামূলক উদাহরণ ছিল। ২০০৯ সালে এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছিল ‌‘সোয়াইন ফ্লু’।

এর কারণে মিশর তাদের সব শুকর মেরে ফেলেছিল, যদিও ভাইরাসটি শুকরের মাধ্যমে নয় বরং মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়।

আনুষ্ঠানিক নাম অনেক সময় সমস্যাও তৈরি করে। ২০১৫ সালে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামেরও সমালোচনা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আমরা দেখেছি যে কিছু কিছু রোগের নামে নির্দিষ্ট কোন ধর্মের বা নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নেতিবাচকতা উস্কে দেয়, যার কারণে ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যায় আচরণের মুখে পড়ে তারা, আর অনেক সময় পশু-পাখিদের হত্যাও করা হয়, এক বিবৃতিতে একথা বলে সংস্থাটি।

যার কারণে, এটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন করোনা ভাইরাসের নামকরণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় থাকা উচিত নয় সেগুলো হচ্ছে:

১। ভৌগলিক অবস্থান

২। মানুষের নাম

৩। জীবজন্তুর নাম বা খাদ্যদ্রব্যের নাম

৪। নির্দিষ্ট কোনো সংস্কৃতি বা শিল্পের উদ্ধৃতি

এতে বলা হয় যে, নামটি হবে ছোট কিন্তু বর্ণনামূলক- যেমন সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)

কিন্তু নামটি নির্ধারণের জন্য একটি সম্পর্ক বা হুকও দরকার, বলেন বেঞ্জামিন নিউম্যান যিনি ভাইরোলজির একজন অধ্যাপক। আইসিটিভির ১০ সদস্যের গবেষক দলের মধ্যেও তিনি একজন যারা নাম ঠিক করার দায়িত্বে রয়েছেন।

অন্য সব নামের তুলনায় এটি বলতে সহজ হতে হবে।

দুই সপ্তাহ আগে এই দলটি নাম নির্ধারণের জন্য আলোচনা শুরু করে এবং শেষ মেষ দুই দিনের আলোচনার পর তারা একটি নামের বিষয়ে নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছান, বলেন অধ্যাপক নিউম্যান যিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান।

তারা এখন নামটি প্রকাশের জন্য একটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে জমা দিচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, কয়েক দিনের মধ্যেই এটি ঘোষণা করা হবে।

জনগণের বোঝাপড়া ছাড়াও আইসিটিভি আশা করছে যে এটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় এটি গবেষকদের সময় বাঁচাবে এবং ঝামেলা কমাবে।

ভবিষ্যতে দেখব যে আমরা ঠিক নামটি দিতে পেরেছি কিনা, বলেন অধ্যাপক নিউম্যান।

আমার মতো কারো ক্ষেত্রে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাসের নামকরণে সহায়তা করতে পারাটা দীর্ঘস্থায়ী এবং পুরো কর্মজীবনের কাজের চেয়ে অনেক বেশি সহায়ক। এটা খুব বড় একটা দায়িত্ব।

সূত্র- বিবিসি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর