১ কোটি ২৫লাখ টাকার অবৈধ বন্ডেড কাগজ আটক

১ কোটি ২৫লাখ টাকার অবৈধ বন্ডেড কাগজ আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর নয়া বাজারের জিন্দাবাহার লেন এলাকার চাঁন মিয়া পেপার মার্কেট ও  এর আশেপাশে অভিযান চালিয়ে ৩টি গুদাম থেকে ১০০ টন অবৈধ বন্ডেড কাগজ উদ্ধার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। আটক পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ২৫ কোটি টাকা। এসব পণ্য শূল্ক কর পরিশোধ করে আনা হলে সরকারের কোষাগারে জমা হত ৭৫ লাখ টাকা। বন্ড দূর্নীতির কারণে সরকার এ পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

রোববার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচালিত এ অভিযানে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেন উপ কমিশনার রেজভী আহমেদ, সহকারী কমিশনার মো. আল আমিন, শরীফ মোহাম্মদ ফয়সাল, মো. আকতার হোসেন।

ঢাকা কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মো. আল আমিন বলেন, দেশের আভ্যন্তরিণ চাহিদা পূরণে দেশি কাগজ শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ বিনা শুল্কে বন্ড সুবিধায় কাগজ ও কাগজ জাতীয় কাঁচামাল কারখানায় পণ্য উত্পাদনে ব্যবহারের কথা বলে এনে, কারখানায় ব্যবহার না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এভাবে বন্ড দূর্নীতির কারণে দেশি কাগজ শিল্প লোকসানে পড়ছে।

আমরা এ দূর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছি।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, অবৈধ সকল বন্ডেড পণ্যের ব্যবসার উৎস-মাধ্যম-গন্তব্য চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কঠোর অভিযান চলানো হচ্ছে। এসব পণ্য কে বা কারা আমদানি করেছে তার মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকালের অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, শতভাগ রপ্তানিমূখি কারখানায় ব্যবহারের জন্য সরকার বন্ড সুবিধা নামে শূল্কমূক্ত কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। শর্ত থাকে, এ সুবিধায় আনা পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে কারখানায় ব্যবহার না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে হাজার হাজার কোটি টাকার শূল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের আটকে এনবিআরে আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ঢাকা কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট অভিযান পরিচালনা করে।

রোববারের অভিযান দুপুর ২টায় শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অভিযানে প্রায়  শতাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় ভ্যাট কর্মকর্তারা, সিআইডি , ডিএমপি সদর দপ্তর ও স্থানীয় থানা পুলিশ অভিযানে সহায়তা করে। অভিযানের শুরুতেই অবৈধ বন্ডেড পণ্যের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দোকান বন্ধ করে দেয়। মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা জোট বেধে বিভিন্ন ভাবে অভিযানে বাধা দেয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে গুদামে তল্লাশি চালিয়ে যাওয়া হয়।

এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে দেশে বন্ড সুবিধা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৈরী পোশাকখাত সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠান বেশি। সারা দেশে ছাড়িয়ে থাকা সাড়ে ৯ হাজার বন্ড সুবিধা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকেরও বেশি এবং ঢাকা কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেটের আওতায় থাকা ৬ হাজারের মধ্যে ৪ হাজারই গার্মেন্টস্ বন্ড। বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্যের অধিকাংশই কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য।

সরেজমিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার, হাশেম টাওয়ারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শূল্কমূক্ত ভাবে আমদানি করা আর্ট বোর্ড, ডুপেস্নক্স বোর্ড, প্রিন্টিং পেপারসহ বিভিন্ন কাগজ জাতীয় পণ্যের রমরমা অবৈধ ব্যবসা চলছে। দেশীয় শিল্পে উত্পাদিত প্রতি টন ২০০ থেকে ৩৫০ জিএমএমের (গ্রাম/ বর্গ ফুট) আর্ট বোর্ড ১ লাখ ২ হাজার থেকে ১লাখ ৫ হাজার টাকায়, ১৬ জিএমএমের হার্ড টিস্যু ১লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়, ডুপ্লেক্স বোর্ড ৬২ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়, জিএমএমের সাদা প্রিন্টিং পেপার (কাগজ)৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ খোলা বাজারে বন্ড অপব্যবহারে বিক্রি হওয়া একই পরিমাণের একই জাতীয় আর্ট বোড ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা, হার্ড টিস্যু ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়,  ডুপ্লেক্স বোর্ড ৫২ থেকে ৫৮ হাজার টাকায়, সাদা প্রিন্টিং পেপার (কাগজ) ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস্ এসোসিয়েশনের সচিব নওশের আলম বলেন, এদেশে বন্ড সুবিধায় সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য। লাভ না রেখে শূধু উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সমান রেখে যে দামে দেশী প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য বিক্রি করছে তার চেয়ে বিনা শূল্কে আমদানিকৃত একই জাতীয় পণ্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে লোকসান গুণে দেশীয় কাগজ শিল্প টিকে থাকা সম্ভব নয়। অথচ স্থানীয় কাগজ কল আমদানিকৃত কাগজ জাতীয় পণ্যের সবটা সরবাহে সক্ষম।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর