‘সামাজিকভাবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছেন চীন ফেরতরা’

‘সামাজিকভাবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছেন চীন ফেরতরা’

অনলাইন ডেস্ক

চীন বা সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রী মানেই সন্দেহজনক করোনা রোগী নয়। কিন্তু এই দুই দেশ থেকে আসা মানুষেরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। কখনো তাঁদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামাজিকভাবেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

আজ সোমবার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা এসব তথ্য দেন।

তিনি বলেন, এসব দেশ থেকে এলেই হাসপাতালে আইসোলশনে নেওয়ার দরকার নেই। চীনেও কিন্তু সব প্রদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েনি। সুতরাং এসব দেশ থেকে ফিরলেই ভীত হওয়ার কিছু নেই, কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার নেই।


সেব্রিনা আরও বলেন, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ, যাদের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে থাকে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর বা চীন থেকে আসা মানুষের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন, গিয়ে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। সামাজিকভাবেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ দেখা গেছে, তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে পৃথকভাবে রাখার কোনো দরকার ছিল না। এসব দেশ থেকে যারা আসছেন তাঁদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করারও পরামর্শ দেন তিনি।

প্রশাসনকে বিশেষ করে ঢাকার বাইরের প্রশাসনকে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার অনুরোধ জানান এই পরিচালক।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে, পরামর্শ করে ওই ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণ আছে কি না যাচাই করে তাঁকে পৃথক রাখা দরকার কি না, কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হবে কি না—সেসব সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য বিভাগ দেবে।

স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগ আইইডিসিআরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান মীরজাদী সেব্রিনা।

করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে ধরতে হবে। কারণ এ ধরনের রোগের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী না হলে সমন্বিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে।

আইইডিসিআর পরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে ১১২টি কল এসেছে, এর মধ্যে করোনা সম্পর্কিত ৭৮টি। এ সময়ে ৬ জন সরাসরি এসে নমুনা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যে কারও করোনা শনাক্ত হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো করোনা আক্রান্ত পাওয়া যায়নি।

সিঙ্গাপুরে যে পাঁচজন বাঙালি আক্রান্ত হয়েছে, তাঁরা একই জায়গায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান তিনি।  

তিনি বলেন, এই পাঁচজন ছাড়া বাংলাদেশ থেকে যারা দেশের বাইরে ঘুরতে গেছেন বা কাজ করছেন কোথাও তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে যারা ফিরছেন, নিজ দায়িত্বে নিজ বাসায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ থাকবেন। প্রয়োজন না হলে বাসার বাইরে কম যাবেন, জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলবেন। মাস্ক ব্যবহার করবেন, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোবেন। তবেই তাঁদের থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।

তিনি বলেন, গুজবের কারণে ইতিমধ্যে একজন মারা গেছেন। শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, কাশি শিষ্টাচার মেনে চলা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখে হাত না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৮৫৭ জন। এর মধ্যে চীনে ৫১ হাজার ১৭৪ জন। নতুন রোগীর সংখ্যা সারা বিশ্বে ১২শ ৭৮, এর মধ্যে চীনে ১১ শ ২১ জন। মোট মৃত্যু ১৬৬৬। চীনের বাইরে ২৫টি দেশে রোগীর সংখ্যা ৬৮২। এর মধ্যে ১৫৭ নতুন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো দেশে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তিনজন মারা গেছে চীনের বাইরে, এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় একজন। সিঙ্গাপুরে নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৭৫ জন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর