ভারতের বিজেপিশাসিত অসমের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা স্কুলের নাম থেকে ‘মক্তব’ শব্দ বাতিলের নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ‘মক্তব’ নাম থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের অন্য স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যায় পড়তে হয়।
গত (শনিবার) হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, খুব শিগগিরি যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ‘মক্তব’ শব্দ আছে তাঁদের নাম থেকে ‘মক্তব’ শব্দ বাদ দেওয়ার নির্দেশ জারি করবে শিক্ষা বিভাগ। গতকাল (রবিবার) বিষয়টি গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এনিয়ে আজ (সোমবার) অসমের ‘এসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস’ বা ‘এপিসিআর’-এর রাজ্য কমিটির সদস্য ও রাজ্য লিগ্যাল সেলের কনভেনর আহমদ আলী বড়ভুঁইয়া বলেন, ‘অসমে বা গোটা ভারতে ‘মক্তব’ শব্দ নিয়ে কেউ কোনোদিন আপত্তি করেনি। এই মক্তব অসমে ও ত্রিপুরা রাজ্যে আছে। মক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দল বা সামাজিক সংগঠন কোনোদিন আপত্তি করেনি, কোনও অভিযোগও কেউ করেনি। অসমে মূলত ‘সিএএ’ ও অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা নিয়ে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, মানুষের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের যে ধারা, তা দেখে সরকার শঙ্কিত হয়েছে।
আহমদ আলী বড়ভুঁইয়া আরও বলেন, ‘মক্তব নাম থাকুক আর যাই থাকুক তাতে তো শিক্ষার কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। মক্তবে একসময়ে নৈতিক শিক্ষা বা ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হতো। আজকাল কোনও মক্তবেই আর সেই শিক্ষক নেই। মক্তবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষরা শিক্ষা দান করছেন। এগুলো প্রথমে মক্তব হিসেবে গড়ে উঠেছিল এতে কিছু কিছু দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে এসব আর নেই। এটাতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। কেবল শুধু শুধু একটা বিভাজন তৈরি করার জন্যই এবং সামনে ২০২১ সালের নির্বাচন থাকায় তারআগে এধরণের একটা সাম্প্রদায়িক পরিবেশ ও মেরুকরণের লক্ষ্যে করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করেছি এবং এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। কারণ হঠাৎ করে এধরণের নাম পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজনও নেই এবং এর কোনও মেরিটও নেই। নাম পরিবর্তন হলে তার সুবিধা কী হবে? কোনও সুবিধা এখানে নেই। নাম পরিবর্তনের উদ্দেশ্য কী? একটা উদ্দেশ্য তো থাকতে হবে। শুধু শুধু এখানে একটা সম্প্রদায়কে চটিয়ে তোলা, এদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলা যাতে এরা এমন কিছু শুরু করে, যেন নির্বাচনে ফায়দা হয়। তাছাড়া যদি এরা ক্ষিপ্ত না ও হয় তাহলেও একাংশের জনসাধারণকে বোঝাবে যে তাঁরা হিন্দুদের স্বার্থে এবং হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটা একটা বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত। ’
অসম মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থার সদস্য ও কাছাড় জেলা সভাপতি ফারুক আহমেদ লস্কর বলেন, ‘আরবি ভাষায় প্রাথমিক, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মক্তব বলা হয়। গ্রামাঞ্চলে একসময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। এজন্য শিক্ষার স্বার্থে মক্তব নাম দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়। পরবর্তীতে সরকার সেই বিদ্যালয়গুলো প্রাদেশিকরণ করে। এখন হটাৎ করে দীর্ঘদিনের প্রাথমিক স্কুলগুলোর নাম পরিবর্তন হাস্যকর। ’
অসমে এআইইউডিএফ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক করিম উদ্দিন বড়ভুঁইয়া (সাজু) বলেছেন, ‘মক্তব বিষয়টা নতুন নয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে মক্তবে পাঠ দান করা হচ্ছে। মক্তবের অর্থই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রী জেনেবুঝেই সমাজে বিভাজন তৈরির লক্ষ্যে এমন ঘোষণা করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ’
তাঁর প্রশ্ন- ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিদ্যামন্দির’ রয়েছে। কেউ এর বিরোধিতা করছেন না। তাহলে মক্তব ইস্যুতে এত বিদ্বেষ কেন?’ রাজ্যের একজন লোককেও ‘মক্তব’ নাম পরিবর্তনের দাবি জানাতে দেখা যায়নি এবং দলের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে বলেও এআইইউডিএফ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক করিম উদ্দিন বড়ভুঁইয়া (সাজু) মন্তব্য করেছেন।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)