উত্তপ্ত নয়াদিল্লি, পুলিশের পর আরও একজনের মৃত্যু

উত্তপ্ত নয়াদিল্লি, পুলিশের পর আরও একজনের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালীন সোমবার দুপুরে এক কনস্টেবলের প্রাণহানির পর এবার সাধারণ এক নাগরিকও নিহত হয়েছেন বলে খবর বেড়িয়েছে। এ ঘটনায় শহরের ১০ জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।

এদিকে দুদিনের সফরে এখন দিল্লিতে অবস্থান করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আজকের এই সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক স্থান নতুন করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে। এই বিক্ষোভ আর অস্থিরতার মধ্যেই সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রায় তাজমহল দর্শন শেষে সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সফরকালীন এই ঘটনায় বিব্রত মোদি সরকার।

শনিবার রাত থেকেই দিল্লির বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত শাহিনবাগের মতো করে বিক্ষোভ চলছে শহরের জাফরাবাদ এলাকার রাস্তায়।

কয়েকশো নারী জড়ো হয়েছেন সেখানে। এ নিয়ে গতকাল রোববারই পুলিশকে হুমকি দেন স্থানীয় বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিনদিনের মধ্যে তিনি বিক্ষোভ হটানোর আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

তার আল্টিমেটামের পর বিক্ষোভ জোরালো হয় জাফরাবাদে। সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ চলকালীন সিএএ-র সমর্থকরা সেখানে হাজির হয়। ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে সিএএ বিরোধী মিছিলের মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। উভয়পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায়। বেশ কিছু গাড়ি ছাড়াও একটি পেট্রোল পাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সোমবার সকাল থেকেই উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, মৌজপুর ও জাফরাবাদে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ওই অঞ্চলগুলোতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকরা একে অপরকে পাথর ছোঁড়া শুরু করলে গতকাল রোববারও সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করলে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। বিক্ষুব্ধদের ইটের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান রতনলাল নামের এক হেড কনস্টেবল। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আরও বেশ কয়েক জন পুলিশ আহতও হয়েছেন। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুপুরের দিকে সংঘর্ষস্থলে আহত হন মোহাম্মদ ফুরকান নামে আরও এক সাধারণ নাগরিক। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিকেলের দিকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এদিকে বিক্ষোভ চলকালীন সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পিস্তল উঁচিয়ে পুলিশকে শাসাচ্ছেন এক যুবক। এছাড়া সেখানে গুলির শব্দও শোনা গেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। তবে ভিডিও ফুটেজে তা দেখা যায়নি।

বিক্ষোভ পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই ভারতের রাজধানী শহরের জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবরপুর, জোহরি এনক্লেভ এবং শিববিহার মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রেন দাঁড়াবে না। ওসব এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি হয়েছে।

এদিকে সপরিবারে এখন ভারতে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার সকালে আহমেদাবাদে অবতরণের পর মোতেরা স্টেডিয়ামে বিশাল সমাবেশে যোগ দেন করেন ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর সস্ত্রীক আগ্রার তাজমহল পরিদর্শন করে ট্রাম্প। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দিল্লি পৌঁছান তিনি।

ইতোমধ্যেই সংঘর্ষে জগিত উভয়পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। সহিংসতা থেকে থেকে দূরে থাকতে বিক্ষুব্ধদের আহ্বান জানিয়েছেন ভারদের জাতীয় রাজধানী অঞ্চজল দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলও।

তবে এই সংঘর্ষের জন্য বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে দায়ী করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। গতকাল জাফরাবাদে সংঘর্ষের পর থেকে একাধিক টুইট করেছেন কপিল মিশ্র। তাতে তিনি লেখেন, ‘দিল্লিতে দ্বিতীয় শাহিনবাগ তৈরি হতে হতে দেব না। ’

ওয়াইসি টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘সাবেক বিধায়ক এবং এক বিজেপি নেতার উস্কানিমূলক মন্তব্যই এসব সহিংসতার জন্য দায়ী। এখন তো এর পেছনে পুলিশের জড়িত থাকার প্রমাণও স্পষ্ট। বিজেপিদলীয় সাবেক ওই বিধায়ককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। সহিংসতা বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে তা আরও ছড়িয়ে পড়বে। ’

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর