চুনারুঘাটে বিপন্ন বনরুই উদ্ধার, দেখতে জনতার ভিড়

সংগৃহীত ছবি

চুনারুঘাটে বিপন্ন বনরুই উদ্ধার, দেখতে জনতার ভিড়

অনলাইন ডেস্ক

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা বাগান। ভারত সীমান্ত ঘেষা এই বাগানের শ্রমিক ও আশপাশের এলাকার লোকজন কিছুদিন পূর্বেও পানীয় জলের জন্য ব্যবহার করত পাতকুয়া। সম্প্রতি সেখানে নলকূপ বসার পর লোকজন আর কুয়ার পানি ব্যবহার করে না। তবে কুয়াগুলো এখনও দৃশ্যমান এবং সেগুলোতে পানি জমানো থাকে।

বুধবার সকাল ৮টায় ওই বাগানের গোলটিলা এলাকার রিকশাচালক উসমান আলী হাত মুখ ধোয়ার জন্য নলকূপে যান তখন পাশেই থাকা কুয়ার মাঝে নড়াচড়ার শব্দ শোনেন। কিছুটা ভয় আর কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যান কুয়ার কাছে। গিয়ে দেখেন একটি অপরিচিত প্রাণি কুয়ার ভেতর নড়াচড়া করছে। এরপর সবাইকে নিয়ে খুন্তি দিয়ে মাটি খুড়ে কুয়ার ভেতর থেকে উপরে নিয়ে আসেন প্রাণিটি।

এই প্রাণিটি হলো মহাবিপন্ন প্রাণি বনরুই।

কিছু ভণ্ড কবিরাজ বনরুই মেরে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে তথাকথিত ওষুধ তৈরির নাম করে ব্যবসা ফাঁদছে। যদিও এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল।

পরে সেটির কোমরে রশি বেঁধে বাড়ির আঙ্গিনায় আটকে রাখেন তিনি। মুহূর্তেই খবরটি রটে গেলে তার বাড়িতে শত শত লোকজন এসে ভিড় জমায় প্রাণিটিকে এক নজর দেখার জন্য। তবে শিশুদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ।

রিকশাচালক উসমান আলী বলেন, ‘আমি কুয়ার মাঝে শব্দ ও নড়াচড়া দেখে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি এটি আক্রমণ না করে মাথা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। সবাইকে নিয়ে মাটি খুঁড়ে এটিকে ওপরে নিয়ে আসি। এটি দেখতে খুবই সুন্দর। লোকজন দেখে অনেক আনন্দ পেয়েছে। এর ওজন ৫ কেজি এবং ৪ ফুট লম্বা হবে। ’

এদিকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে নালুয়া চা বাগানে উপস্থিত হয়ে বনরুইটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে সেটিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, হবিগঞ্জ বন বিভাগের ডেপুটি ফরেস্টার রেহান মাহমুদ, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ অফিসার আব্দুল মোতালেব ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান কো-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কালাম।

হবিগঞ্জ বন বিভাগের ডেপুটি ফরেস্টার রেহান মাহমুদ জানান, সুস্থ অবস্থায় বনরুইটিকে উদ্ধার করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে। মুহূর্তের মাঝেই এটি গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যায়। প্রাণিটি বিপন্ন। এক সময় চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলে এটি প্রচুর পরিমাণ দেখা যেত।

পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও বাপার আজীবন সদস্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, হবিগঞ্জের বনাঞ্চল হরেক রকম পাখি এবং বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত। তবে নির্বিবাদে বন উজাড় করার কারণে বন্যপ্রাণির আবাসস্থল ও খাদ্যের সংকটের জন্য অনেক সময় বণ্যপ্রাণি লোকালয়ে চলে আসে। তবে বনরুইটিকে আটক করার পর কেউ এটিকে আঘাত না করার জন্য তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। কারণ বিভিন্ন সময়ে লোকালয়ে আসা প্রাণিকে মেরে ফেলার ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে।

তিনি আরও জানান, বনরুই মাংস ও আঁশের জন্য শিকার করা হয়ে থাকে। কিছু ভণ্ড কবিরাজ বনরুই মেরে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে তথাকথিত ওষুধ তৈরির নাম করে ব্যবসা ফাঁদছে। বাংলাদেশের মতো চীন এবং ভিয়েতনামেও লোকজ ওষুধ তৈরির জন্য বনরুই ব্যবহার করা হয়। কিডনির রোগ, অ্যাজমা বা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য বনরুইয়ের আঁশ দিয়ে কবিরাজি ওষুধ তৈরি করা হয়।

যদিও এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। হবিগঞ্জের আদালত প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সময় বনরুইয়ের তৈল বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই প্রাণিটিকে রক্ষা এবং এর ওপর গবেষণার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া উচিত।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল