যত ভাবছি ভয় পাব না, ভয় তত পেয়ে বসছে...

যত ভাবছি ভয় পাব না, ভয় তত পেয়ে বসছে...

অর্পিতা ভট্টাচার্য

নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা সবাই করে। আর যখন প্রকৃতিতে ভয়ানক সংক্রমণ তখন তো আমরা বাঁচতে চেষ্টা করবই। জীবন থেমে থাকে না। রোজ সকালে  যখন হাঁটতে বের হই, বাঁচা ও বাঁচানোর চিত্র নানা প্রশ্নের অবতারণা করে।

সকালবেলা শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় যতগুলো ট্রেন আসে সবগুলোতেই ভিড় থাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে আসা লোকের, যারা বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে। গত তিন চার দিন ধরে সংখ্যায় তাদের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আজ একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, বলল, 'দিদি, তোমাদের কলকাতায় আসব কেন? কোন ঠাকুর নেই। আমাদের গ্রামে ঠাকুর আছে রোগ থেকে বাঁচাবে।
'

অনেকেই ব্যবহার করছে মাস্ক কিংবা কাপড় দিয়ে ওড়না দিয়ে নাক, মুখ বেঁধে আসছে। দেখে ভালো লাগলো। কিন্তু যে ভিড়ে তারা আসে কীভাবে বাঁচাবে নিজেকে? আমার বাড়ির সবিতা দি'কে আমি ১৫ দিন সবেতন ছুটি দিয়েছি। কিন্তু অন্য বাড়ি তো দেয়নি, ফলে আসতে হচ্ছে। সকালবেলা চা খায় আমাদের বাড়িতে। মায়ের যাতে সংক্রমণ না হয় তাই দূরে থাকছে। ওরা সাবধানতা অবলম্বন করছে! বললাম, 'আসছ কেন?' 'বলল' 'দিদি অন্য বাড়িতে ছুটি দিল না। একটানা ছুটি দিলে মাইনে দেবে না। '

কিন্তু ডাস্টবিন থেকে যে মেয়েগুলো জিনিস কুড়াচ্ছে তাদের সংক্রমণ রুখব কী করে? আমাদের বাজারে যারা রোজ সবজি নিয়ে আসে তাদের একজন বলল, 'আমাদের কিছু হবে না। দিদি আর হলেই বা কি করব? এর থেকেও তো বড় ভয়, বাজারে না আসতে পারলে খাব কি?' বেঁচে থাকাটাই যেখানে মস্ত বড় প্রশ্ন, সেখানে আমাদের মতো দরিদ্র দেশে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে কিভাবে?

সচেতনতা, সাধারণ মানুষ অনেক রক্ষা করছি। কিন্তু কাল এক ডাক্তার যা করলেন তাকে কি বলবেন? লন্ডন থেকে ফিরে কোনরকমভাবে কোন সর্তকতা না নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে তিনি অপারেশন করলেন। এখানেই শেষ নয়। আরও পাঁচজন ডাক্তারের টিম নিয়ে বাঁকুড়ায় গেলেন অপারেশন করতে। গতকাল জ্বর ইত্যাদি কারণে তিনি বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে নিজেকে আইসোলেশন রেখেছেন। যদি কোনভাবে তিনি আক্রান্ত হন তাহলে কলকাতা মেডিকেল কলেজের রোগীসহ অন্যান্য ডাক্তার, নার্স ও তার কর্মীরা সবাই সন্দেহের আওতায় চলে যাবেন। একে কি বলবেন?

যত ভাবছি ভয় পাব না, ভয় তত পেয়ে বসছে। কে জানে মুক্তি কোথায়?

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল