'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নির্দেশ দিচ্ছেন সেগুলো প্রচার করুন'
করোনা ভাইরাস

'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নির্দেশ দিচ্ছেন সেগুলো প্রচার করুন'

অনলাইন ডেস্ক

করোনা ভাইরাস নিয়ে যারা ‘কী করতে হবে’ বিষয়ক পোস্ট দিচ্ছেন তাঁদের কাছে একটাই অনুরোধ যে, দয়া করে এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট পেশাদার কর্তৃপক্ষ যে সব নির্দেশ দিচ্ছেন সেগুলো অনুসরণ করুন, অন্যদের অনুসরণ করতে উৎসাহী করুন, সম্ভব হলে সেগুলো প্রচার করুন।  

এই ভাইরাস বৈশ্বিক বিষয় – এটা মোকাবেলায় যা করা যেতে পারে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যে সব পরামর্শ দিচ্ছেন সেগুলো ওপরে আস্থা রাখা দরকার। আপনি-আমি বিশেষজ্ঞ নই, ফলে বিশেষজ্ঞদের এবং যারা দিনরাত ধরে তাঁদের নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কাজ করছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের কাজ – তাঁদের পরামর্শ শোনা জরুরি।

এই ভাইরাস নিয়ে সবটাই জানা গেছে তা নয়।

ফলে নতুন তথ্য আরও জানা যাবে – সেই মতে বিশেষজ্ঞরা তাঁদের পরামর্শ দেবেন। এর সঙ্গে কমন সেন্স ব্যবহার করুন। ইতিমধ্যেই যা জানা গেছে তাতে কী করলে ক্ষতি হবে সেটা বোঝা খুব কঠিন কাজ নয়। এগুলোও কোনও গ্যারান্টি নয়।
এর সঙ্গে সঙ্গে একেবারে সাধারণ খবর রাখলেই বোধগম্য কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়।

সোশ্যাল ডিস্টেন্স থেকে কোয়ারেন্টাইন থেকে লক ডাউনের লক্ষ্য একটাই – যাতে করে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে। আমরা জানি যে, এখন পর্যন্ত যে ধরনের ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর একটা বড় অসুবিধার দিক হচ্ছে যারা দরিদ্র, ঘনবসতিতে থাকেন (যেমন বস্তি বা শরণার্থী শিবির), ফ্যাক্টরি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন (যেমন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প), যারা এমন পেশায় আছেন যেখানে ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি (যেমন মাছ বাজার/ মাংসের দোকান) তাঁদের জন্যে এই ধরণের নিয়ম কানুন মানা অসম্ভব।

আমাদের বিবেচনা করতে হবে তাঁদের সাহায্য করা যায় কীভাবে। এই জন্যে প্রধান ভূমিকা রাষ্ট্রের। সেই চাপ তৈরি করা জরুরি। স্বচ্ছতার দাবি তোলাও জরুরি – রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অস্বচ্ছতা এবং এই বিষয়কে অবহেলা করার পরিণতি ভালো হয়নি। সেটা যেখানে এই ভাইরাস প্রথম লক্ষ্যণীয় হয়েছে সেই চীনের প্রাথমিক পদক্ষেপ এর বিস্তার করতে কতটা ভূমিকা রেখেছে সেই প্রশ্ন তোলার সময় এটি নয়। কিন্ত অস্বচ্ছতার ফল অন্যত্রও ভালো হয়নি।

একই সঙ্গে অবহেলা করার অনন্য উদাহরণ হচ্ছে ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্র। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এই বলে যে, এটি এত বড় ব্যাপার নয়। ইউরোপের অন্যত্রও সেই রকম ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এখন খুব এগ্রেসিভ এপ্রোচ নেয়া হচ্ছে। ফলে বিপদ কাটেনি – খুব শীঘ্রই কাটবে না – কিন্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এটা আশার বিষয়।

এই ভাইরাস নিয়ে সে সব খবর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মধ্যে দুটো খবরের দিকে আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা। দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক হারে ছড়ানোর একটা উৎস চিহ্নিত করা গেছে – তাঁকে বলা হচ্ছে ‘পেশেন্ট ৩১’। কোরিয়া জানুয়ারি ২০ থেকে এক মাস ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রেখেছিলো, বড় শহরগুলোতে প্রায় সবারই পরীক্ষা করা হচ্ছিলো। কিন্ত অবস্থার বদল ঘটে মার্চের ৩ তারিখের পরে।

ঠিক দুই সপ্তাহ আগে – ৬ ফেব্রুয়ারি - ডেইগু (Daegu) শহরে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে একজন মহিলা হাসপাতালে যান, কিন্ত তাঁকে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয় নাই। এই শহরে ২০ লাখ মানুষ থাকেন। এর পরের কয়েক দিনে তিনি দুইবার তাঁর চার্চে সম্মিলিত প্রার্থনায় অংশ নেন – ৯ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি। এই সময় তাঁর জ্বর হয়। ১৫ তারিখ তাঁকে ডাক্তাররা বলেন তাঁর পরীক্ষা করা উচিত।

ডাক্তারের কথা না শুনে তিনি তাঁর নিয়মিত জীবন যাপন করতে থাকেন। এর মধ্যে ছিলো বন্ধুদের সঙ্গে স্থানীয় একটি হোটেলে গিয়ে কয়েক দিন বুফে লাঞ্চে খাবার খাওয়া। ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর পরীক্ষা করা হয় এবং ১৮ তারিখ ছিলো জানা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

তিনি ছিলেন, দেশের ৩১ নাম্বার আক্রান্ত ব্যক্তি। এর পরে দেখা গেলো যে ঐ চার্চের কয়েক শো সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ঐ শহরের এই ক্লাস্টার এবং অন্য আরেকটি ক্লাস্টার – যেখানে ঐ চার্চের সদস্যরা একটি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলো সেখানে থেকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাস ছড়িয়েছে। বলা হচ্ছে কোরিয়ার ভাইরাস সংক্রমণের একটি প্রধান উৎস হচ্ছে এই শহর।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে যে সংখ্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে, গত বুধবার দেখা গেছে তাঁর মধ্যে ৭৭ জন একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত একটি মিটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। সেই সময়ে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৯৫ জন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বায়োজেন আয়োজিত একটি মিটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।

মহামারী বিষয়ক আলোচনায় এই ধরনের ঘটনাকে বলা হয় ‘সুপারসিডিং ইভেন্ট’ বা ‘সুপারসিডার’। কেন হয়, কীভাবে সেগুলো এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কিন্ত এই দুই ঘটনা থেকে কমন সেন্স দিয়ে কী বুঝতে পারা যাচ্ছে?

লেখক: ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল