তোমার চাকরি-ভবিষ্যত আমি দেখব, আরিফুলকে ডিসি সুলতানা

তোমার চাকরি-ভবিষ্যত আমি দেখব, আরিফুলকে ডিসি সুলতানা

অনলাইন ডেস্ক

কারাগার থেকে জামিন পাওয়া সাংবাদিক আরিফুলকে ফোন দিয়ে নানা রকম প্রলোভন দিয়েছেন সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন। তাদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, ‘এখন মিডিয়াকে অ্যাভয়েড (এড়ানো) করে থাকো। মিডিয়াতে কথা বলো না।

দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপাতত চিন্তা করার দরকার নাই। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করার কিছু নাই। আমরা তোমার পাশে থাকবো।
তোমার মামলা প্রত্যাহার করে নেবো। একটু সময় দিও। একটু পজিটিভলি দেখতে হবে। ’

জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপরই এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাকে কারাগারে নেওয়া ‘নাটের গুরু’ সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন।

সুলতানা পারভীন আরিফকে বলেন, ‘যাই হোক একটি ঘটনা ঘটে গেছে। তুমি একটু রেস্ট নাও। যাও। একটু নিরিবিলি থাকো। ’ এ কথোপকথনে তিনি যে পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কথোপকথনে এনকাউন্টারে দেওয়ার হুমকি পাওয়ার মতো অপরাধ করেছেন কিনা সাংবাদিক আরিফ তা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এনকাউন্টারের মানসিকতা আসলে আমাদের ছিল না। ওইভাবে ছিল না। ’

আরিফ তখন তাকে বেধড়ক মারধর কেন করা হয়েছে তা ডিসির কাছে জানতে চান। তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় স্বাক্ষর নেওয়া চারটি কাগজ ফেরত চান। এ সময় ডিসি বলেন, ‘যাই হোক একটি ঘটনা ঘটে গেছে। তুমি একটু রেস্ট নাও। যাও। একটু নিরিবিলি থাকো। ’

আরিফের স্বাক্ষর নেওয়া চারটি কাগজ ফেরতের ব্যাপারে ডিসি বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে ফেরত দেব... কথা বলে নিজে আমি তোমাকে ফেরত দেব... যদি নিয়ে থাকে ওরা। কোন কাগজে সই নিয়েছে। তোমার মোবাইল কোর্টের ইয়াতে (কাগজ) সই ছিল, বুঝছো। ’

আরিফ বলেন, ‘স্যার, আমার চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটা সই নিয়েছে। ’ উত্তরে ডিসি বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের আদেশে তোমার সই নিয়েছে। ওটা মোবাইল কোর্টের ইয়াতেই। আচ্ছা, যাই হোক এখন ঘটনা যেভাবে ঘটে গেছে, যা ঘটেছে তুমিও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেইখো। আমি নিজেও আসলে অনুতপ্ত। তুমি একটু রেস্ট নাও। যাও। থাকো। নিরিবিলি একটু থাকো, ঠিক আছে। ’

মুঠোফোনে আলাপের এক পর্যায়ে তাকে এনকাউন্টারের বিষয়টি তোলেন আরিফ। তিনি এনকাউন্টার পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করেছেন কি-না তাও জানতে চান আরিফ। এ সময় ডিসি পারভীন যে উত্তর দেন, তাতে পুরো ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। সদ্য প্রত্যাহার হওয়া এই জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এনকাউন্টারের মানসিকতা আসলে আমাদের ছিল না। ওইভাবে ছিল না। ’

এ সময় আরিফ তার দুটি সন্তানের কথা জানান ডিসিকে। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বলেও জানান।

আরিফ বলেন, ‘তারা কী উদ্দেশ্যে এই কাজটি করলেন এটা আমার জানা বাঞ্ছনীয়। এবং তারা আমার চারটি কাগজে সই নিয়েছে, কেন নিয়েছে এটা আমার দেখতে হবে। আমার দুই নামেই সই নিয়েছে তারা। এবং আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত। ’

উত্তরে পারভীন বলেন, ‘তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে, ভালো থাকবা ইনশাল্লাহ। ’

সাংবাদিক আরিফ এ সময় ডিসিকে বলেন, ‘স্যার, আপনি আমাকে একদিন ডাকতে পারতেন, আমি কি আসতাম না?’ উত্তরে ডিসি বলেন, ‘না, সেটা আসতা। এখনও আসবা, সমস্যা নাই। এখন ধরো যে, কষ্ট তো তুমিও পাচ্ছো, কষ্ট আমিও... হয়ে গেছে যেটা, এটা এদিকে দেখতে হবে একটু পজিটিভলি। এটাই বলার জন্য...। ’

এ সময় আরিফ ডিসিকে বলেন, ‘স্যার, আমাদের তো মিডিয়ার সামনে যেতে হবে। ’

এ ব্যাপারে ডিসি তাকে বলেন, ‘তাহলে এখন কি করতে চাচ্ছো? আমি যেটা বলবো যে এখন মিডিয়াকে অ্যাভয়েড করে থাকো। যাও। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। আমরাও তোমার পাশে আছি আর কি। ’

এ সময় আরিফ ফের তার সই নেওয়ার চারটি কাগজের প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, ‘আমাকে তো চোখ বেঁধে সই নেওয়া হয়েছে। আমি বলতেও পারবো না সেগুলো কী কোর্টের কাগজ ছিল না সাদা কাগজ। আমাকে কাগজগুলো ফেরত দিতে হবে স্যার। ’ 

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন এ ব্যাপারে বলেন, ‘ঠিক আছে আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। এটা তো মোবাইল কোর্টের নির্দেশনাতেই ছিল। অন্য কিছুতে নেয়নি। আর তোমার বিষয়ে অত ইয়া তো আমাদের...যাই হোক... ঘটনাটা ঘটেছিল। ’

আরিফ আরও বলেন, ‘স্যার আমাকে তো মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার এই মামলা স্যার প্রত্যাহার করে দিতে হবে। ’ তখন ডিসি তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘তোমার মামলা প্রত্যাহার করে দেব, সমস্যা নাই। একটু সময় দিও। একটা-দুইটা শুনানির সময় লাগবে। তোমার চাকরির ব্যাপারেও আমি দেখবো। চাকরির ব্যাপারে কোনো টেনশন করো না। ’

উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফ এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি।

এ ছাড়াও সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এ সময় একাধিকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার জেরে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফের বাসায় হানা দিয়ে তাকে তুলে ডিসি অফিসে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়।

পরে রোববার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর